এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ছোড়া বুলেট বিদ্ধ হয়ে নিহত বাবলু
ফারাজির ছেলে সুজন মাহমুদ বাদি হয়ে আদালতে করা হত্যা মামলার তদন্তে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী
আদালতের নির্দেশে রবিবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও চিকিৎসকের উপস্থিতিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন পিবিআই’য়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের প্রধান গোরস্থান থেকে নিহতের লাশ উত্তোলন করেন।
৫৫দিন পর নিহতের গলিত লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সেখানেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান ও কুস্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: হামিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক
মনিরুজ্জামান। এসময় মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখ করা গুলিবিদ্ধের বিবরনের সাথে সাদৃশ্য
মেলাতে লাশের মাথা উল্টে পাল্টে গুলিবিদ্ধের আলামত খুঁজে পান করে নিশ্চিত করেন উপস্থিত তদন্ত কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য গত ১৯ আগষ্ট কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের বাবলু ফারাজি (৫৮) নামের ব্যাক্তি পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদি হয়ে সুনির্দিষ্ট বিবরণসহ হুকুমদাতা হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাহবুবুল আলম হানিফসহ জেলা শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ৭ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১২৬ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৪০/৫০ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মাহমুদা সুলতানার আদালতে মামলা করেন।
মামলাটি আমলেনিয়ে বিচারক ৩০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন পিবিআইকে। সিআর মামলা নং ১১৫১/২০২৪ তাং ১৯/০৮/২০২৪।
বাদী সুজনের অভিযোগ,‘গত ০৫ আগষ্ট বেলা সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিদিনের মতো ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে অবরোধ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে পড়ে। এসময় কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষন করছিলো। আমার বাবা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রাণ বাাঁচাতে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের পূর্ব পাশর্^স্থ চিপা গলির মধ্যে ঢুকে পরে। সেসময় মডেল থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সাহেব আলী আন্দোলনকারী মনে করে তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সরাসরি গুলি করলে গুলিটি মাথার ডানপাশে লেগে বামপাশ দিয়ে এফোঁর ওফোঁর হয়ে বেড়িয়ে যায়। এতে বাবলু ফারাজি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনাকরেন।
ঘটনার দিনে কুষ্টিয়া থানা ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঘটনার পর থেকে প্রায় ৭/৮ দিন সম্পূর্নরূপে থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা দায়েরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। পরে থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহ ধরে আমি পিতা হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে যায় কিন্তু পুলিশ আমার মামলা গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে পিতা হত্যার বিচার প্রার্থনা করে আদালতে যায়। আমি আদালতে দেয়া এজাহারে যা কিছু বলেছি তার সবকিছুর প্রমান স্বরূপ প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীসহ আলামত ও ভিডিও চিত্র রয়েছে। আমি আমার পিতা হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়’। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চিকিৎসকের
উপর্স্থিতিতে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করে নিহত বাবলু ফারাজির লাশ উত্তোলন ও সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি।
মামলাটি সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে নির্ধারিত ৩০দিন অতিক্রম করায় আরও ৩০দিনের সময় চাওয়ায় আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। এখন ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা আদালতে প্রতিবেদন
দাখিল করবো’। নিহত বাবলু ফারাজির লাশ উত্তোলন ও সুরতহাল প্রস্তত শেষে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাহিদ হাসান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা থাকায় নিহতের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখিত বিবরণ মতে, নিহতের মৃত্যুর কারন হিসেবে গুলিবিদ্ধের কথা বলা আছে। প্রাথমিক ভাবে নিহতের মাথায় গুলিবিদ্ধের আলাতম প্রতিয়মান হয়েছে’। এখন যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসেরা রিপোর্টটি হাতে আসলেই তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন হবে’।
হা/01/1024 dtbangla

Discussion about this post