Print Date & Time : 7 June 2025 Saturday 2:45 am

বারবার টেন্ডার দিয়েও কোন সাড়া মিলছে না সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুর

রফিকুল্লাহ্ কালবী, কুষ্টিয়া
গড়াই নদীতে সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুর টোল আদায়ের নিমিত্তে বারবার ইজারার নোটিশ দিচ্ছে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কিন্তু এই নোটিশের কোন সাড়া দিচ্ছে না কেউ। ১৩ আগস্ট ২০২৪ থেকে এ যাবৎ মোট ৯ বার টেন্ডার দেয়া হয়, এখন গত ২৯ মে থেকে চলছে ১০ম বারের মতো টেন্ডার। এতে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের লোকজন হতাশ হলেও তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দিতে থাকবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আতঙ্ক বাড়ছে নিয়মিত সেতু ব্যবহারকারী জনতার মধ্যে। তারা ভাবছেন, এখন হয়তো সেতুর ইজারা নিতে কেউ সাহস পাচ্ছে না, তবে নির্বাচনের পর দলীয় সরকার ক্ষমতায় এলে তখন হয়তো কোন একটি সংস্থা এই ব্রিজের টোল আদায়ের ইজারা কিনে নিতে পারে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে এই টোল আদায় বন্ধের ব্যাপারে ছাত্র-জনতা উদ্যোগী হতে থাকে এবং ৭ আগস্ট সকাল ৮.২০টায় টোল প্লাজা তছনছ করে দেয়। সেই থেকে ১২ আগস্ট সকাল ১১টা পর্যন্ত টোল আদায়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ১২ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরাসরি ফের টোল আদায় করতে থাকে। পরদিন ১৩ আগস্ট রাত ১০টায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা টোল প্লাজায় ব্যাপক ভাংচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। টোল আদায়কারী ব্যক্তিগণ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কোন রকমে জান নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই থেকে অদ্যাবধি কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নে গড়াই নদীতে নির্মিত এই ৫শো মিটারের ছোট সেতুটির টোল আদায় বন্ধ আছে।

১৯৯৮ সালে মাত্র ১৬ কোটি টাকার বাজেটে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণে ধীরগতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দীর্ঘ সূত্রিতার ফলে বাড়তে থাকে ব্রিজের নির্মাণ ব্যায়। ২০০৫ সালের নভেম্বর নাগাদ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া অবধি ব্যায় দাঁড়ায় ৩৫ কোটি টাকা। ঐ বছরের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যানচলাচলের জন্য ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। সেই থেকে নিয়মিত চলছিলো টোল আদায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টোল আদায়ের সমস্ত হিসাব এই প্রতিবেদকের কাছে নেই। ২০১৬-১৭ সালে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই ব্রিজের ইজারা বাবদ পায় ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৯-২১ এই দুই বছরে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৮ টাকা। ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৮ দিনের জন্য ইজারা বাবদ পায় ২৫ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮১ টাকা। ব্রিজটির টোল আদায়ের জন্য সর্বশেষ ইজারা পেয়েছিলো কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়াস্থ ‘মেসার্স মাইক্রো ডাইনামিক’ নামক প্রতিষ্ঠান।

অতএব সহজেই অনুমান করা যায় মাত্র ৩৫ কোটি টাকার এই সেতু থেকে কুষ্টিয়া সওজ ইতোমধ্যেই কয়েকশো কোটি টাকা ইজারা আদায় করে ফেলেছে। আর কতদিন টোল আদায় করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, এসবের কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যতদিন মনে করে ততদিন টোল আদায় করতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই যে ১০ মাস টোল আদায় বন্ধ আছে এর জন্য সরকার প্রচুর টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্রিজ ব্যবহারকারীরা সামান্য ৫-১০ টাকা করে দিলে তাদের কী এমন ক্ষতি? এটা করলে সরকার লাভবান হয়, টোল আদায় বন্ধ থাকায় তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তাই তিনি নিয়মিত টেন্ডার দিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি আশা করেন যে, কেউ না কেউ কোন এক সময় ইজারা গ্রহণ করবেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেরা সরাসরি টোল আদায় করছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়- বিশাল জনরোষের মুখে তাদের পক্ষে টোল আদায় করা সম্ভব না। যেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইজারা নিতে ভয় পায় সেখানে সড়ক বিভাগ সরাসরি কীভাবে টোল আদায় করবে?

এদিকে এই ব্রিজে নতুন করে যে টোল আদায়ের পায়তারা চলছে তার প্রতিবাদে কুমারখালী, খোকসা ও সেতু এলাকায় প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। স্থায়ীভাবে টোল বন্ধের ঘোষণার দাবি নিয়ে সর্বশেষ গত ২১ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আহত জুলাই যোদ্ধা কুমারখালীর আয়োজনে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমারখালী শাখার আহবায়ক আব্দুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও জামায়াতের কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি পদপ্রার্থী আফজাল হুসাইন, কুষ্টিয়া শহর ছাত্র শিবিররে সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, কুমারখালী প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সোহাগ মাহমুদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক শরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার মুখপাত্র পারভেজ মোশাররফ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা মুশফিকুর রহমান তিহা, নয়ন হোসেন প্রমূখ।

সর্বস্তরের জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষ কিছুইতেই এই সেতুতে পুনরায় টোল চালু হতে দিবে না বলে বদ্ধপরিকর। এই এলাকার সকল রাজনৈতিক দল ও সুধীমহল এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। তারা যে কোন মূল্যে সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুতে পুনরায় টোল চালুর অপচেষ্টাকে প্রতিহত করার কথা বলেছেন।