আবেদ হোসাইন, নিজস্ব প্রতিনিধি, যশোর: যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার একটি বিশাল জনপদের বসবাস করা এলাকা ভবদহ। এই ভবদহকে বলা হয় যশোরের দুঃখ।
এ অঞ্চলের মানুষের বারো মাস চোখের নোনা জলে খাল বিল নদীর পানি একাকার হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে গরু ছাগল পশুপাখির সাথে বসবাস করছে তারা।শুষ্ক মৌসুমেও পানি বন্দি থাকে লক্ষ মানুষ।তাই আফসোস করে বাসিন্দারা বলছেন আমরা হচ্ছি জলজ প্রাণী,সাপ,ব্যাঙ্গ,পোঁকা-মাকড়ের সাথে
আমাদের বসবাস। সরকার ও আমলারা মিলে আমাদের জলজ প্রাণি। বানিয়ে রাখছে। আমরা আর জলজ প্রাণি হয়ে বাঁচতে চাই
না।
যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর, কেশবপুর এবং
খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে এসব নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ কারণে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।টানা বৃষ্টির কারণে ভবদহ অঞ্চলের অন্ততঃ দুই শতাধিক গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধ এসব বাড়ির লোকজন পরিবার নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। কেউ কেউ খোলা রাস্তার পাশের্টোং ঘরবেঁধে মানুষ ও গবাধিপশু একসাথে দিন কাটাচ্ছেন। ভবদহ জলাবদ্ধতার অন্ততঃ এক মাস অতিবাহিত হলেও পানি না কমায়
জনজীবনে নেমে এসেছে দূর্ভোগ। ভেঙ্গে পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থাও শিক্ষা ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়।
ভবদহ অঞ্চলের মনিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের বিদ্যুৎ রায় বলেন,একমাস ধরে জলে মধ্যে বাস করছি।জানি না এ অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাবো। কামিনীডাঙ্গা সরোজিৎ রায় বলেন,আমরা বড় কষ্টে আছি।বাশের সাঁকো কিংবা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে আমাদের
চলাফেরা ।লখাইডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ রীতা মণ্ডল(৪২) বলেন,গরু,ছাগল,হাসমুরগী নিয়ে বিপাকে পড়েছি।একদিকে থাকার জায়গা নিয়ে,অন্যদিকে তাদের খাবার যোগাড় নিয়ে।সব মিলে খুব কষ্টে আছি আমরা।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব চৈতন্য পাল বলেন, ভবদহ অঞ্চলের অন্ততঃ দুই শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।তলিয়ে গেছে আবাদি ফসল,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,ধর্মীয় উপাসনালয়। এক মাস ধরে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এ জনপদের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১-ভেন্টের উপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫কিলোমিটার খননকাজ শুরু করবে।

Discussion about this post