Print Date & Time : 15 May 2025 Thursday 1:10 pm

বার্ষিক লাঠিখেলা উৎসব’২০২২ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক চৌধুরী ওস্তাদ ভাই এবং প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক চৌধুরী রতন স্মরণে বার্ষিক লাঠিখেলা উৎসবের রূপরেখা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তর কুষ্টিয়ার উদ্যোগে।

শুক্রবার বেলা ১০টায় বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী কেন্দ্রীয় দপ্তরের মিলনায়তনে সহসভাপতি মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম রঞ্জু সহ অন্যান্য নেতৃব্ন্দৃ।

লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৩৩ সালে প্রয়াত সিরাজুল হক চৌধুরী আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ন অনুষঙ্গ হিসেবে কুষ্টিয়াতে গড়ে তুলেছিলেন এই লাঠিখেলা সংগঠনকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা ঘাত প্রতিঘাত সমস্যা সীমাবদ্ধতার দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্যদিয়ে আজও পর্যন্ত এর ঐতিহ্য ধারন করে চলেছে ওস্তাদ ভায়ের বংশপরম্পরা। তারই ধারবাহিকতায় আজ এই খেলাটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে এর চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে নানা কর্মপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

আমেরিকা ও কানাডায় বাঙ্গালী কমিউনিটি, স্কুল ও সে দেশের মাল্টিকালচারাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওস্তাদ ভাইয়ের উত্তরসূরিরা, সেখানে খেলা প্রদর্শন করেন-লাঠিখেলা এখন ওস্তাদ ভাইয়ের চতুর্থ প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে গেছে। আমেরিকাতে তাঁর নাতি জিয়া হাসান চৌধুরী রিপন ও কানাডায় নাতনী শারমিন সুলতানা আরজু তার সন্তানদের নিয়ে গৌরবের সাথে ওস্তাদ ভাইয়ের এই লাঠির খেলা প্রদর্শন করেন।রিপন ও আরজু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, দেশে ও দেশের বাইরে লাঠিখেলা প্রদর্শন করে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর জন্য সন্মান ও মর্যাদা কুডিয়ে এনেছে। অন্যদিকে, ওস্তাদ ভাইয়ের আরেকজন নাতনী মন্জুরীন সাবরিন চৌধুরী রূপন্তী, রতন চৌধুরীর জেষ্ঠ্য কন্যার লোকজ সংস্কৃতির বিষয় লাঠিখেলা বিষয়ে একক অর্জন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীকে আরো ব্যাপক আকারে সমৃদ্ধ করেছে।
এদেশে যেমন বিদেশী খেলা জুডো, কুংফু, ক্যারাটে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আদিমযুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের যুদ্ধ অস্ত্রও আজ অলিম্পিক খেলার ইভেন্ট হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে।

যেমন, বর্শা ও চাতকী নিক্ষেপ, হেমার থ্রো, তীর ধনুক, মল­যুদ্ধ, বক্সিং, তরবারী, আগ্নীয় অস্ত্রও খেলার ইভেন্ট হিসেবে প্রতিযোগিতায় সংযোজিত হলেও দৃষ্টি না দেয়ায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা পতিনিয়ত বিপন্নের মুখে ধাবিত। যেখানে ১৯৭২ সালে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষনের দিনে লক্ষ মানুষ সমবেত হয়েছিল বাংলার এই বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা-স্বাধিকার আন্দোলনে এই বাঁশের লাঠির ব্যবহার হয়েছিল। তাই সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে গ্রাম বাংলার এই জনপ্রিয় লাঠিখেলাকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

আমাদের দেশেও একদিন এই লাঠিখেলা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে-এই প্রত্যাশা করি। এলক্ষ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী দেশের আনাচে কানাচে অযত্নে অবহেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট লাঠিয়াল গ্রæফকে সংগঠিত করে বর্নাঢ্য আয়োজনে বার্ষিক লাঠিেেখলা উৎসব পালন করে। তারই অংশ হিসেবে আগামী ৭ ডিসেম্বর দিনব্যাপী কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে বার্ষিক লাঠিখেলা উৎসব-২০২২ অনুষ্ঠিত হবে। এআয়োজনকে সার্থক ও সফলভাবে সম্পন্ন করতে সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন আয়োজক কমিটি।

খালিদ সাইফুল /দৈনিক দেশতথ্য/২ ডিসেম্বর ২০২২