Print Date & Time : 19 April 2025 Saturday 4:51 am

বাসে ডাকাতি, শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিন ডাকাত গ্রেফতার

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি নগদ টাকাসহ মালামাল লুট ও দুই নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় আন্তজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্ধি দিয়েছে এবং একজনকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। ডাকাতির সময় লুটে নেওয়া মোবাইল সেট, দেশীয় অস্ত্র ও বেশ কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

দায়িত্বে অবহেলায় ওই দিনের ঘটনায় মির্জাপুর থানার উিউটি অফিসার উপপরিদশক মো. আতিকুজ্জামন আতিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুই নারী শ্লীলতাহানির ঘটনার মুল রহস্য উৎঘাটনসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদস্যরা হচ্ছে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামক্ষ্ণৃপুর গ্রামের ইসমাইমল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ হোসেন (৩০) এবং ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার সাভার টানগেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করা হয়।
এদের নামে ঢাকা, সাভার ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

মির্জাপুর থানা পুলিশ সুত্র জানায়, বাসের যাত্রী ওমর আলী, মজনু মিয়া ও সোহাগ হাসান নামে তিন যাত্রী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মামলা হয়। মামলা নং-১৭, তারিখ ২১/০২/২০২৫ ইং। ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-সোধিত-২০২০) এর ১০, তৎসহ ৩৯৭ / ৩৯৭, পেনাল কোড ১৮৬০।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তুলে ধরেন, রাজশাহীগামী চলন্তবাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদলের তিন সদস্যর মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর একজনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হলে আদাললত রিমান্ড মঞ্জুর করেন্।
শনিবার বিকেলে তিন ডাকাতকে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন করিমের আদালতে হাজির করা হলে আদালত এই আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এএসআই) আহসান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত ১.৪৫ ঘটিকায় রাত অনুমান ৪.০০ ঘটিকা পর্যন্ত রাজশাহীগামী ইউনিক রয়েল রোড পরিবহন বাসে ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্তবাসে ৩/৪ ঘন্টা সময় ধরে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে।

বাসটি ওই রাত ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াাকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়রা উড়াল সেতু অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে বাসের চালক বাস চালিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। বাসটি চন্দ্রা আসার পর যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশকে ডাকাতির ঘটনা বললে তাদের মির্জাপুর থানায় যেতে বলা হয়। মির্জাপুর থানায় এসে যাত্রীরা ডিউটি অফিসারকে ঘটনা খুলে বলেন। ডিউটি অফিসার এএসআই আতিকুজ্জামান তাদের ওসি সাহেব আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। কয়েক মিনিট পর তারা চলে যান। পরে বাসটি ভোর রাতে নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌছে। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাসের চালক, সুপারভাইজর এবং হেলপারকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পুলিশ ওই তিনজনকে ৫৪ ধারায় চালান দিলে ওই দিনই তারা জামিনে মুক্তি পায়।

এবিষয়ে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) রাত ২টার দিকের বাসযাত্রী ওমর আলী, মজনু ও সোহান হোসেন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৮/৯ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়।

মামলা দােেয়রের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মির্জাপুর থানা পুলিশ ও টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার মডেল থানায় অভিযান চালায়। শুক্রবার বিকেল ৫.৩০ ঘটিকায় সাভার মডেল থানার গেন্ডা এলাকা থেকে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল সেট, ১টি ছুরি এবং নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্ত জেলা ডাকাত দলের সদস্য। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগড়ঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় ১টি ও সাভার মডেল থানায় ১টি বাস ডাকাতির মামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে।এই ঘটনার সাথে আরো যারা জড়ীত আছে তাদের মধ্যে আরো কয়েকজনকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। অচিরেই তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনবো।
আমরা বাসের যাত্রীদের খুজে বের করেছি। তাদের সাথে কথা বলে আমাদের কার্যক্রম করেছি। বাসের নারী যাত্রীদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা আমরা আমলে নিয়ে কাজ করছি। মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় টাচে যেতে পারে এবং তা শ্লীলতাহানি পর্যন্ত যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গইল গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আহসান জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন ডাকাতকে শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন করিমের আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেপ্তার শরীফ ও সবুজ ঘটনার সাথে জড়ীত ছিল বলে স্বীকারাক্তিমুলক জবানবনন্দি দেয়। অপরজন শহীদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিতকে অধিকতর জিজ্ঞাসাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে এই ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার কারনে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেন জানান। তিনি বলেন, ভূক্তভোগী বাসযাত্রী যখন মির্জাপুর থানায় আসে তখন থানার ডিউটি অফিসার ছিলেন এএসআই আতিকুজ্জামান। তিনি কোন কাজ না করে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে বলেন। যাত্রীরা কয়েক মিনিট পর চলে গেলেও ডিউটি অফিসারের নিকট তাদের কোন নাম ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার ছিলনা। এইভাবে দায়িত্বে অবহেলা করায় শুক্রবার পুলিশ সুপার তাকে সাময়িক বরকাস্তের ঘোষনা দেন। শুক্রবার রাতেই তাকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ।

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান চৌধুরী বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী শ্লীলতাহানির ঘটনায় আজ শনিবার গ্রেফতার তিন ডাকাতকে আদালতে হাজির করা হরে দুইজন স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্ধি দিয়েছে এবং একজনকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।