বিএডিসির পাটবীজ বপন করায় কপাল পুড়েছে মেহেরপুরের পাটচাষিদের। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রণোদনা হিসেবে এ বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল। অল্প দিনেই এসব পাটক্ষেতে ফুল এসেছে সেই সাথে বাড়ছে না। পাটবীজ বপন করে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। তবে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে। আর কৃষি বিভাগ বলছে তাদের দপ্তরে কোন তথ্য নেই।
মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১২ হাজার কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পাটবীজ সরবরাহ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ওই বীজ সরবরাহ করা হয় চাষিদের মাঝে। বিএডিসির পাটবীজ বপন করার পর বীজ গজালেও মাস খানেক পর দেখা দেয় বিপত্তি। পাটক্ষেতে পাটগাছে ফুল ও ফল ধরেছে। পাটক্ষেত বেড়ে উঠছে না। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রতিকারে কোন পরামর্শ দেয়নি চাষিদের। এমনি অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
সারবাটি গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন জানান, ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এখন পাটে ফুল ফল হয়েছে এতে লাভ তো দূরে থাক লোকসানের আশা করছি।
হিজুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিএডিসির বীজ সংগ্রহ করেন। এক দু মাস যেতে না যেতেই পাটের ফুল ও ফল দেখা দিয়েছে। শ্রমিক দিয়ে জমি থেকে ফুল ও ফল ওয়ালা পাটগাছ উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে এতে অনেক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
চলতি মৌসুমে গাংনী উপজেলায় ছয় হাজার জন চাষিকে বীজ দেয়া হয়। কম বেশি প্রতিটি ইউনিয়নের চাষিরা অভিযোগ করছেন তাদের পাটক্ষেতে ফুল ও ফল ধরেছে। বাড়ছেনা পাট এতে মোটা অংকের টাকা ক্ষতি হচ্ছে তাদের। এনিয়ে উপজেলা সমন্বয় সভাতে আলোচনা করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে ফুল ঝরে যাবে বলে দাবী করা হয়েছে। চাষি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আগামীতে কেউ বিএডিসির পাটবীজ নিবে না।
সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের বিএডিসির বীজ দেয়া হয়েছিল। বীজ বপনের কয়েক মাসের মধ্যেই ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। এই ফুল ও ফল আশায় পাটগাছ বৃদ্ধি না পেয়ে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। বিআরডিসি থেকে যে সকল বিষ দেওয়া হয় তার মধ্যে ধান ও ভুট্টার বীজগুলো ভালো বাদবাকি সব নিম্নমানের। এ নিয়ে আমি মাসিক সবার মিটিংয়ে কথা বলার পরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বেশি বৃষ্টিপাত হলে সমস্যা সমাধান হবে। কোন সার বা কীটনাশকে এর সমাধান নেই বলেও জানান তিনি। কৃষি অফিস কোন পরামর্শ দিচ্ছে না এমন অভিযোগের এই কর্মকর্তার উপরে ।
কুষ্টিয়া বিএডিসি উপ-পরিচালকআব্দুর রহমান জানান, আবহাওয়ার কারণে পাটক্ষেতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় বীজে সমস্যা হয়নি কেন ? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
মেহেরপুর উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বেশি বৃষ্টিপাত হলে সমস্যা সমাধান হবে। কোন সার বা কীটনাশকে এর সমাধান নেই বলেও জানান তিনি। কৃষি অফিস কোন পরামর্শ দিচ্ছে না এমন অভিযোগের ব্যাপারে কোন জবাব মেলেনি।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৭ জুন ২০২৩