Print Date & Time : 1 May 2025 Thursday 4:21 am

বিএটি’র বিরুদ্ধে আইন অমান্য ও চরম স্বেচছাচারিতার অভিযোগ

এনামুল হক কুষ্টিয়া : দেশের সর্ববৃহৎ তামাকজাত পন্য প্রস্তুত কারখানা বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো বিএটি’র বিরুদ্ধে শিল্প কারখানা স্থাপন ও শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্রমিকদের বকেয়াসহ ন্যায্য পাওনাদি পরিশোধ না করে চরম স্বেচছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

উদ্ভুত পরিস্থিতির নিরসনে তদন্ত পূর্বক শ্রম মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রেরিত ২২ দফা সুপারিশ কারখানা কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন না করায় ফুঁসে উঠেছে
শ্রমিকরা। তারা দাবি বাস্তবায়নে বিগত ১০দিন ধরে লাগাতার শ্রমিক ধর্মঘটসহ ও কারখানা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিএটি’র মৌসুমী শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট শ্রম আদালত ও উচ্চআদালতের রায়ে শ্রমিকদের ন্যায় সংগত
দাবি মেনে নেয়ার নির্দেশনাও মানছেন না কর্তৃপক্ষ উপরন্ত অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আদালতে উপস্থাপন করে আইনী গ্যারাকলে বিএটি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের হয়রানি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।

পরিস্থিতির উত্তোরনে সোমবার সন্ধায় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আহুত দীর্ঘ সময়ের সমঝোতা সভাও পন্ড হয়েছে বিএটির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে। বিষয়টি গোপন রাখতে সভাস্থলে উপস্থিত মিডিয়ার কর্মীদের সাথেও চরম বেপরোয়া ও অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগ উঠেছে বিএটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

পক্ষগণকে সমঝোতায় বাধ্য করতে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার অভিমত ব্যক্ত করলেন জেলা প্রশাসক।

ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া-ঝিনাইদাহ মহাসড়কের চৌড়হাস এলাকায় বিএটি’র কারখানার প্রধান ফটকে বৈষ্যম্যবিরোধী শ্রমিক আন্দোলনের ব্যানারে শ্রমিকদের ২২দফা দাবি আদায়ের অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে মৌসুমী শ্রমিকরা।
আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’র বিধিমতে ২০১২ থেকে অদ্যবধি কোম্পানীর নিকট শ্রমিকদের পাওনা মুনাফা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, এক ও অভিন্ন নিয়োগ পত্র, আইন বহির্ভুত ভাবে বাইরে রাখা শ্রমিকদের চাকরিতে পূর্নবহালসহ ন্যায্য দাবি করে আসছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, খাল দখল, জমি দখল, পরিবেশ দুষন ও অতি উর্বরা কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষি ধ্বংসসহ নানাবিধ জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে শ্রমিক কৃষকের ঘামঝরানো পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে। অথচ সেই শ্রমিক কৃষকদের
নানা ভাবে বঞ্চিত করে আইনী ফ্যাকরা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের চরম বেপরোয়া আচরণের শিকার হয়ে আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে শ্রমিকরা। অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া ও ন্যায্য পাওনাদি পরিশোধ করে কারখানাটিতে শ্রম বান্ধব
পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে এই আন্দোলন।
মৌসুমী শ্রমিক সাব্বির আহমেদ জানায়, ‘ইতোপূর্বেও যখন শ্রমিকরা তাদের দাবির বিষয়ে কথা বলতেন, তখনই উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা নানা তালবাহানা করে আন্দোলন দমিয়ে দিতেন। এবারও সেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জেলা
প্রশাসনের মাধ্যমে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ। আমরাও সরল মনে বিশ্বাস করেছিলাম যে, এবার হয়ত কর্মকর্তাদের গো-ধরা বরফ গলেছে; একটা সন্তোষজনক শান্তিপূর্ন সমাধান করবেন তারা। অথচ শেষ পর্যন্ত সমঝোতা

বৈঠকে তাদের অনর অবস্থার কথা জানিয়ে, কোনরূপ সমাধান না করেই সভা শেষ করে দিয়েছেন। তারা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মানতে নারাজ বলে সরাসরি ডিসি স্যারকে জানিয়েছেন। সেই কারণে এখন আমাদেরও পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
আমরাও আর আমাদের দাবি আদায় না করে কারখানার গেট ছাড়ছি না। তাতে যা কিছু ত্যাগ করা লাগুক আমরা তাতেও প্রস্তুত’।
কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার শ্রম পরিদর্শক মুনছুর বিল্লাস জানান, ‘গত বছর অক্টোবরে মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে
অনুষ্ঠিত সমন্বিত সভা থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে শ্রমিক অসন্তোষ দুরীকরণে
ব্যাটকে যে সময় বেধে দেয়া হয়েছিলো, কর্তৃপক্ষ সেটা না মানার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগপত্র না দেয়া, বিনা কারনে শ্রমিক ছাটায়, বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ, ঝুঁকি ভাতাসহ প্রায় ২২টি ধাপে উল্লেখিত সুপারিশ মেনে শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সময় দেয়া হয়। এসব
মীমাংসিত বিষয় বাস্তবায়ন করে শ্রম মন্ত্রনালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করা হয়েছিলো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত
বিএটি কর্তৃপক্ষ আদৌ কোন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই। এভাবে চলতে থাকলে তো শেষাবধি হয়ত শ্রমিকদের আইনগ পথেই এগুতে হতে
পারে’।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, ‘তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান বিএটি কর্তৃপক্ষ এবং কারখানার মৌসুমী শ্রমিকদের মধ্যে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটার একটা শান্তিপূর্ন সুরাহার জন্য অনুষ্ঠিত সমঝোতা সভা কোন প্রকার সমাধান ছাড়াই সমাপ্ত হয়েছে। যেহেতু
এখানে আইন কানুন বিধিবিধান মানা না মানার প্রশ্ন এসেছে সে কারনে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বশেষ আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া ছাড়া কোন সমাধান
হবে বলে মনে হচ্ছে না’। তবে এবিষয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ফলশুন্য সমঝোতা সভা শেষে বিএটি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাওয়ায় তারা প্রতিবেদকসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দেয়ার মতো চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

সোমবার সন্ধায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো: জাহাঙ্গীর আলম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীলসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বিএটি’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র
ম্যানেজার কামরুল হাসান ভুঁইয়া, হেড অব এইচ আর রায়হান আবেদ, হেড অব কমার্শিয়াল ব্যারিষ্টার সাবরিনা, কুষ্টিয়া বিএটির কারখানায় দায়িত্বরত প্লান্ট ম্যানেজার মুকিত আহমেদসহ ৬জন উর্দ্ধতম কর্মকর্তা। এছাড়া শ্রমিকদের পক্ষে সাব্বির আহমেদের নেতৃত্বে ৬জন আন্দোলনরত শ্রমিক।