এনামুল হক কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে কুষ্টিয়া আদালতে আনা হয়। এরপর দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে হাজিরা করা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে একটা ৫১ মিনিটে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির আরেক কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কুষ্টিয়া কারাগারে ছিলেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বিতর্কিত ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এসএম তানভীর আরাফাত। কুষ্টিয়া জেলায় আসার পর থেকেই নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি এসব কাণ্ডে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। ভুগতে হয় বিভাগীয় শাস্তিও।
নিহত বিএনপি কর্মী কুদরত আলীর ছেলে বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন যে, আমার বাবা কুদরত আলী বিএনপির একজন সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমিসহ আমার বাবা ও পরিবার বিএনপি করে আসছি। বিএনপির সব কর্মসূচিতে আমার বাবা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার কারণে এলাকার সভা সমাবেশে ও কর্মসূচিতে আমার বাবা কুদরত আলী ব্যাপক লোক সমাগম করতে পারতেন।
এ কারণে আওয়ামী লীগের কিছু সুবিধাভোগী পুলিশ আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় আটক ও হত্যা করার পরিকল্পনা করে। যাতে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এই ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি (১) ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার, (২) এসআই রোকনুজ্জামান, (৩) এসআই মেহেদী হাসান, (৪) এসআই শাহজাহান, (৫) এএস আই আনিচুর রহমান, (৬) কুষ্টিয়া জেলার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আহমেদসহ অনান্য পুলিশেরা আমার বাবাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাত ২টার দিকে আমাদের আমার নিজ বাড়ি মুন্সিগঞ্জে উল্লেখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন পুলিশ আসে এবং আমার বাবা কুদরত আলীকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২৩ জুলাই হতে ২৫ জুলাই পর্যন্ত আমিসহ আমার আত্মীয়স্বজন ও বিএনপি দলের লোকজন আমার বাবা কুদরতের সন্ধান করতে থাকি। থানায় গিয়ে আসামি নিশিকান্ত সরকার ওসি তদন্তকে জিজ্ঞাসা করি আমার বাবা কোথায়? বলে আমরা কিছু বলতে পারব না।
২৫ জুলাই ভোর বেলায় শুনতে পাই আমার বাবাকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। বাবার মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে। এই সংবাদ পেয়ে প্রথমে থানায় যায় এবং সেখানে জানতে পারি মরদেহ কুষ্টিয়া হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সেখানে গিয়ে আমার বাবা কুদরত আলীর মরদেহ দেখতে পাই। বাবার বুকের ডান দিকে ও বাম দিকে দু’টি গুলির চিহ্ন, দুই হাতে, পিঠে, মুখে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আমার বাড়ি থেকে বাবাকে অপহরণ করে গুম করে নির্যাতন করে ও গুলি করে আসামিরা হত্যা করে মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রেখে চলে যায়। লাশ দাফনের পর ২৬ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার বলে যে মামলা করলে তোরও একই পরিণাম হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে এবং পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত কুষ্টিয়া কিলার তানভীর উপাধি পাওয়ায় তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারিনি। ফলে আমি ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো মামলা করতে পারেনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অত্র অভিযোগ দায়ের করিলাম।
এ বিষয়প দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, দৌলতপুর থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়েছিল আদালতে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, এছাড়া ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া সাবেক এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে। নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

Discussion about this post