হাতিবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। একই সময় আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা গুরুতর আহতাবস্থায় গোপনে রংপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের রংপুর ৬১ বিজিবির অধীনে দোলাপাড়া সীমান্তের ৮৮৮ নং পিলারের নিকট এই ঘটনা ঘটেছে।
গরু পাচার করতে গিয়ে তারা বিএসএফ এর গুলিতে তারা নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহত ও আহতদের পুরো পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা একই সীমান্তের বড়খাতা ইউপির দোলাপাড়া গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমানের পুত্র মোঃ সাদিক মিয়া (২৪) ও একই সীমান্তের ফকিরপাড়া ইউপির পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামের মোঃ আব্দুস সামাদ মিয়ার পুত্র মো নাজির হোসেন মংলু (৪২)। আহতরাও একই সীমান্তের ফকিরপাড়া ইউপির পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামের মোঃ কাছিম মিয়ার পুত্র মোঃ আব্দুল গনি মিয়া (৩২) ও একই সীমান্তের পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামের মোঃ আবুল হোসেনের পুত্র মোঃ আজিজুল ইসলাম(২৮)।
সূত্র দৈনিক দেশতথ্য বাংলার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, গরু পাচারকারি দলের ৩০/৩৫ জনের একটি চক্র ভারতীয় গরু পাচারকারি দলের ফোন কল পেয়ে গরু আনতে ভারতে যায়। তারা বিশেষ কায়দায় লাগসই প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের কোটা (কপিকল) ব্যবহার করে কাঁটাতারের বেড়ার ওপরে উঠে ওপারে যায়। সেখানে পূর্ব হতে ভারতীয় গরু পাচারকারিরা ১৫/২০টি গরু নিয়ে অপেক্ষা করছিল।
এই সময় ভারতের ৭৫ বিএসএফের ভবেরহাট বারঘরিয়া ক্যাম্পের সদস্যরা ওই পাচারকারি দলের খুব কাছে ছিল। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারনে তারা বিএসএফের অবস্থান টের পাননি। তাই বিএসএফ পাচারকারি দলের সদস্যদের র্টাগেট করে খুব কাছে হতে রাইফেলের গুলি ছুঁড়ে।
এতে চার জন গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। এদের মধ্যে দুই জন ঘটনাস্থলের মারা যায়। পাচারকারীরা বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টায় নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আইনী জঠিলতা এড়াতে গুলিবিদ্ধদের গোপনে রংপুরে উন্নত চিকিৎসা করাচ্ছেন।
এই আন্তর্জাতিক পাচারকারি চক্রের গডফাদাররা সীমান্তে গরু, মাদক, চোরকারবারি ও মানব পাচারের কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। চক্রের সিন্ডিকেটে চিকিৎসক, আইনজীবি, আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্য, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, এমন কী তথাকথিত সংবাদ কর্মীরা সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকেন।
আজ পর্যন্ত যত সীমান্ত হত্যা হয়েছে তার মধ্যে ফেলানি হত্যা ছাড়া কোন হত্যার মামলা নেয়া হয়নি। এমন কী দেশের আইনে পাচারকারী চক্রের কাউকেই কোন বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। সীমান্ত হত্যায় নিহতদের স্বজনরা নিঃস্ব হয়ে যায়। আর পকেটে অর্থ ভরে রাজনীতিবিদ, আইনজীবি, পুলিশ, বিজিবির ও তথাকথিত সংবাদ কর্মীরা।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা ও সুধিসমাজ সীমান্ত হত্যা নিয়ে তেমন সোচ্চার নয়। তারা রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছেন। বিজিবি দায়সারা গোছের প্রেস রিলিজ দিয়ে দায়িত্ব সারে মাত্র। শুধু বলে সীমান্ত হত্যায় জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের ১টি সূত্রে জানা গেছে, জেলার হাতীবান্ধা সীমান্তের বনচৌকি, ভুটিমঙ্গল, জাওয়ারী সীমান্তে কয়েকদিন হতে প্রকাশ্যে সকাল ৭ টায় সীমান্তের মানুষ গরু ও মাদক পাচার করতে দেখেছে। তারা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কিছু দূর্নীতিবাজ জড়িতের কথা বলে। একই অবস্থা মোগলহাট, ফলিমারী, ধরলাপাড়ের বালারহাট সীমান্তে। পাচার হওয়া গরু প্রকাশ্যে বালাহাটে বিক্রি হতে দেখা যায়।
রংপুর ৬১ বিজিবির দোলাপাড়া বিওপি ক্যাম্পের সুবেদার মোঃ আব্দুল জলিল বিএসএফের গুলিতে নিহতদের বাড়ি পরিদর্শন করে এসেছেন। সীমান্ত গ্রামে হাতীবান্ধার দোলাপাড়ায় নিহত ও আহতদের গ্রামে পুলিশের ১টি টহলটিম পর্যবেক্ষণে রেখে।
এই ঘটনায় গ্রামটিতে শোকের ছায়া ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ বিজিবি রাতে সীমান্তে সঠিক ভাবে সার্বক্ষণিক টহল দিলে সীমান্ত হত্যা হ্রাস সম্ভব। স্কুল শিক্ষক রহিমা খাতুন জানান, রহস্যজনক কারনে গরু পাচারকারি দলের সদস্যরা আইনের আওতায় আসে না। উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, কখনো শুনেছেন গরু পাচারকারি দলের চক্রের নামে থানায় মামলা হয়েছে। সীমান্ত গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনে সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিজিবির পাশাপাশি কমুনিটি পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, আনছার, ভিডিপি ও তরুণ সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে রাত্রিকালে টহল বাড়াতে হবে। রাত্রিকালে কোন অবস্থাতে সীমান্তে কাউকে অপতৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না। যদি জরুরি প্রয়োজেনে সীমান্তে যেতে হয় বিজিবি ও বিএসএফের মাধ্যমে যেতে পরামর্শ দেন।
রংপুর বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল ইয়াছির জাহান জানান, সীমান্তে রাত্রিকালীন বিজিবির টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিজিবি পক্ষে সীমান্তে গুলি বর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ডিসেম্বর ৩০,২০২২//