কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব- মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি। আমরা পাই একটি লাল-সবুজের পতাকা।
প্রতি বছর বিজয়ের মাসে বেড়ে যায় পতাকার বেচা-কেনা। বিজয় দিবসকে ঘিরে এখন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে মৌসুমি পতাকা বিক্রেতার।
কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটের সামনে কথা হয় মৌসুমি পতাকা বিক্রেতা সিদ্দিক আহমেদ এর (৪৫) সঙ্গে।
তিনি বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে পতাকা বিক্রি করি। প্রতি বছরের ডিসেম্বরে ছয় দিন, ফেব্রুয়ারিতে দুই দিন এবং মার্চ মাসে দুইদিন পতাকা বিক্রি করা হয়। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালাই।”
স্ত্রী, এক মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে ৫জনের টানাপোড়েনের সংসার। দৈনিক আয়ে চলতে কষ্ট হয়। সংসারে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা খরচ। কিন্তু কোনো কোনো দিন আয় হয় ৪০০-৫০০ টাকা। সে কারণে প্রায় দিনই ঘাটতি থেকে যায়।
বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাজারে সবকিছুর দাম এখন চড়া। আগে বড় সাইজের যে পতাকা ৬৫ টাকায় কিনতাম এখন সেটি বেড়ে ৯৫ টাকা। এছাড়াও মাঝারি সাইজ ৪০ টাকা ছিল এখন সেটি ৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ছোট সাইজের পতাকাও এখন ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা পাইকারি দরে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে আগের চেয়ে লাভও কমে গেছে।”
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। গেলো এক সপ্তাহ ধরে তার এলাকার চারজন মিলে এই কুষ্টিয়া শহরে এসেছেন পতাকা বিক্রি করতে।
শহরের মজমপুরে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন তারা। সেখান থেকে পতাকা বিক্রির জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে যান তারা।
এসব পতাকা ঢাকা থেকে পাইকারি কিনে নিয়ে আসা হয়। আবার এলাকায় কাপড় কিন্তু পতাকা তৈরি করে সেসব বিক্রি করে থাকেন।
সিদ্দিক আহমেদ বলেন, “দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই পতাকা বিক্রি করি। যখন নিজের দেশের পতাকা কারো হাতে তুলে দেই তখন অন্যরকম অনুভূতি হয়।”
পতাকা কিনছিলেন সাদিক হাসান রহিদ নামের এক তরুন৷ তিনি বললেন মোটরসাইকেল এর সামনে রাখতে ছোট পতাকা এবং তার দোকানে টানানোর জন্য বড় পতাকা কিনলাম।
বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটের নিঝুম লেডিস কর্ণারের মালিক ঝর্ণা বেগম নামের এক দোকানী বললেন, প্রতি বছরই নতুন পতাকা কেনা হয়। গতবছর যে পতাকা দেড়শ টাকায় কিনেছ এবার সেটির দাম নিলো দুইশো টাকা। তবুও কিনলাম। দেশমাতৃকার টানে জীবন বাজী রেখে আমাদের দেশটাকে স্বাধীন করেছে। আর বিজয় মানেই আমাকে আনন্দ উল্লসিত উৎফুল্ল করে তোলে এই দিবসে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post