আমিনুল হক দিলু,বিয়ানীবাজার: বিয়ানীবাজার পৌরশহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পেরিয়ে নিদনপুর গ্রাম। এই এলাকায় যাওয়ার পরই এক ভাংচুরা রাস্তার দূর্দশা যে কারো চোখে পড়বে।
অন্তত: ১০ বছর থেকে রাস্তাটি প্রতি বছর পানিতে ডুবেছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গেছে। খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে এলাকার কয়েক হাজার হাজার বাসিন্দার দুর্ভোগ এখন চরমে। পৌরশহরের ৯নং ওয়ার্ডের নাগরিক এবং মুল্লাপুর ও লাউতা ইউনিয়নের মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরশহরের মুরাদগঞ্জ মসজিদের নীচের অংশ থেকে মুল্লাপুর ইউনিয়ন অফিস হয়ে গোডাউন বাজার-কালিবাড়ি বাজার-বারইগ্রাম বাজার পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। এই রাস্তার টানা ৫ ফুট অংশও ভালো নেই। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যেতে টমটম, রিক্সা ও অটোরিকশার যাত্রীরা ঝাঁকুনিতে নাকাল হয়ে পড়ছেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ময়নুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার এই অবস্থা দেখে আসছি। অথচ আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধি, নেতারা সচেতন হলে কবে এটি সংস্কার করা সম্ভব হতো।’ টমটম চালক ফারুক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই রাস্তা ভাঙা। অনেক কষ্ট হয়। আমি ৯ মাস থেকে এই রাস্তায় টমটম চালাই। আসার পর থেকে দেখছি এই অবস্থা। এ রাস্তায় একটা রিকশাও যেতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়।’ কলেজ ছাত্র আদনান বলেন, এই সড়ক নিয়ে কিছু বলার নেই। এই সড়কের অবস্থা সব সময়ই খারাপ থাকে। বিভিন্ন স্থানে ১ থেকে ৩ ফুট পরপর অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। সড়কের দুই পাশে খোলা ড্রেন। একটু বৃষ্টি হলেই পানি রাস্তায় জমে যায়। সিএনজি অটোরিকশা চালক আকলু মিয়া জানান, সড়কটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। কেউই সংস্কার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ভাঙা সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে কয়েকদিন পরপর অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যায়।
বিয়ানীবাজার-কালিবাড়ি বাজার সড়ক দিয়ে মুল্লাপুর ইউনিয়ন কার্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়, পাতন-আব্দুল্লাহপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি চাকরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে চলাচল করতে হয়। দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র বাইপাস সড়ক হওয়ায় ট্রাক, ট্রাক্টর, অটোভ্যান, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস প্রতিনিয়ত চলাচল করে। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় যান চলাচল কমে গেছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এছাড়াও নিদনপুর, মুল্লাপুর, পাতন, মাটিকাটা, বাউরভাগ, আব্দুল্লাহপুর, আলীপুর, গোলাটিকরসহ আরো ৫-৬টি গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি।
দুর্ভোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে এলাকার লোকজন আরোও বলেন, একটু বৃষ্টি হলে সড়কের গর্তগুলোতে হাঁটুপানি জমে যায়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার জন্য রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ঠিক সময় পায় না। খুব কমসংখ্যক অটোরিকশা চলে। এ ছাড়া অন্যান্য যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চাইলেও সড়কের নাম শুনলেই আসতে চায় না। বাধ্য হয়ে আদিম যুগের মতো হেঁটে চলাচল করতে হয়। মাঝে মাঝে পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আব্দুর রহমান আফজল জানান, এই সড়কটির সংস্কারের দায়িত্ব উপজেলা এলজিইডির। কিন্তু তাদের অর্থ সংকটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সংড়কটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী দীপক চন্দ নাথ বলেন, নতুন করে রাস্তাটি একটি প্রকল্পে ডুকানোর ব্যবস্থা করছি। আশাকরি এই দূর্ভোগ বেশীদিন থাকবেনা।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৩১ মে ২০২৪