Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 4:20 pm

বেনাপোলে হাকর নদী আবারও খনন ও ড্রেজিং এর কাজ শুরু

শার্শা(উপজেলা)প্রতিনিধি: ভারত সীমান্ত ঘেষা যশোরের বেনাপোলের সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়নপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার বেনাপোল হাকড় নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের কাজ আবারও শুরু হয়েছে। 

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে যশোরের সীমান্তবর্তী হাকর নদীর খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে বেনাপোলবাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।দীর্ঘ ৬৮ বছর পর গত বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে খনন কাজ হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারতের ইছামতী নদীর সাথে সংযুক্ত প্রবহমান হাকর নদী ১৯৫৫ সালে নদীর দু‘পাড়ের প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নেয়। 

ভূমি কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৬২ সালে হাকর নদী চলে যায় ব্যক্তি মালিকানায়। খনন শুরুর পর এলাকার প্রভাবশালীদের মামলা জটিলতায় তিনদফা বদ্ধ হয়ে যায় খনন কাজ। এক বছর পর আবারো শুরু হয় খনন ও ড্রেজিং কাজ।

প্রাথমিকভাবে বেনাপোলের সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার খনন করা হবে। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বাকি অংশ পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পূনঃস্থাপন করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান।বেনাপোলের বড়আঁচড়া, ছোটআঁচড়া, ভবারবেড়, বেনাপোল ও নারায়ণপুর মৌজার মধ্য দিয়ে রঘুনাথপুরের কোদলা নদী হয়ে বেতনা নদীর সঙ্গে মিশে গেছে এ হাকড় নদীটি। নদী খননে বাঁচবে জীব বৈচিত্র রক্ষা পাবে পরিবেশ কৃষকেরা হবে উপকৃত। নদীটি খনন হলে তারা বন্যার পানি থেকে রক্ষা পাবেন এবং দখল করে গড়ে উঠা ভবন, মাছের ঘের, পুকুরসহ নানা স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রবাহ ফিরিয়ে আসবে বলে আশ করেন বন্দরবাসী।যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন. বেনাপোলের নারায়ণপুর থেকে বেনাপোল সাদীপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। ৫ কি: মি: খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা। ২২ কিলোমিটার দূরত্বের বাকি অংশ পরবর্তীতে ধাপে ধাপে খনন করে বিভিন্ন বিলের সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগামী জুন মাসের মধ্যে খননকাজ সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হলেও দখলদারি প্রভাবশালীদের মামলার কারণে এতদিন কাজ বন্ধ ছিল। আদালতের নির্দেশে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে নদ খননের পক্ষে এলাকার ৯৭ শতাংশ মানুষ অবস্থান নিয়েছে। খনন কাজ শেষে বেনাপোলবাসী বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। যেমন জলবদ্ধতা দূর হবে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।

উল্লেখ্য বেনাপোল স্থলবন্দরের ২০০ গজ দূরে হাওর নদীর অবস্থান। বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য হাকর নদী খনন করা খুবই জরুরি। ভারতের গঙ্গা, ইছামতি, ফারাক্কা ও কুদলা নদীর সঙ্গে সীমান্তের সাথে সংযুক্ত হাকর নদী। বেনাপোল সীমান্তের সংযুক্ত হাকর নদী পথে দু‘দেশের মধ্যে চলাচল করত লঞ্চ ও রং বেরংঙের পাল তোলা নৌকা। ভারতের কোলকাতা বনগা, বশিরহাট থেকে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে বজরা নৌকা ভিড়তো বেনাপোলের এই হাকর নদীতে।

নদীটি ছিল এ অঞ্চলের জেলেদের মাছ শিকারের প্রধান ক্ষেত্র।  মৎস্য, কৃষি ও ব্যবসায়ীদের জীবন জীবিকার উৎস ছিল নদীটি। বিশাল পরিসরে নদীটির দু‘পাড়ে গড়ে ওঠে সাদিপুর, নামাজগ্রাম, নারায়নপুর, ধান্যখোলা, নাভারনসহ অসংখ্য গ্রাম। কালের বিবর্তে প্রবাহমান নদীটি সরু খালে পরিণত হয়ে গেছে। দেশ স্বাধীনের পর নদীকে ঘিরে শুরু হয় অপ-দখল আর কেনাবেচার উৎসব।রাজনৈতিক পালাবদলে এলাকার প্রভাবশালী মহল জবরদখল করে নদী দখল করে তৈরি করেছে হাজার পুকুর।গড়ে তুলেছে মাছের ঘের। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে জোয়ার ভাটা। বাংলাদেশীদের দেখাদেখি ওপারে ভারতের পেট্রাপোল এলাকায় বেড়িবাধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা ভূয়া জাল দলিল করে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে পররবর্তী কালে। বেনাপোল স্থলবন্দরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নদীটি দখলমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। সম্প্রতি হাকর-নদী খনন কাজ শুর হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেনাপোলবাসী।

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪