প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে গেলেও বৈদ্যুতিক লাইন, ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির সংযোগ লাইন এখনও পুরোনো অবস্থায় রয়ে গেছে। সংযোগ মাথার ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘটতে পারে যেকোন সময় বড় দূর্ঘটনাও।
নগর জুড়ে এখন তারের জঞ্জাল। বিদ্যুতের খুঁটিতে জালের মতো জট পাকিয়ে আছে তার। তারগুলো কোন সংস্থার, কোন কাজের, সাধারণভাবে তা বোঝার উপায় নেই। প্রায় সময় এ তারগুলো থেকে শর্ট খেয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে। আগষ্ট মাসে কাজীর দেউড়ি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি থেকে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। এতে এ্যাপোলো শপিং কমপ্লেক্সসহ আশপাশের মার্কেটে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। চলতি মাসে আন্দরকিল্লাহ মোড়ে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আগুন ধরে যায়। প্রতিদিন নগরের কোন না কোন জায়গায় এভাবে আগুনের ঘটনা ঘটছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে নেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। শহরের অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীনভাবে সম্প্রসারিত বিভিন্ন সেবা সংস্থার ঝুলন্ত তারের কারণে প্রায়ই বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে।
বিদ্যুতের তার থেকে অন্যান্য তার বিদ্যুতায়িত হতে পারে, যাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ঘটতে পারে অগ্নিদুর্ঘটনা। কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। বহু আগে থেকেই বিটিআরসি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটরস প্রতিষ্ঠানকে (কোয়াব) মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ নেওয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
প্রতিষ্ঠান দুটিকে সংযোগ ক্যাবল সরিয়ে নেওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে আলটিমেটাম দিলেও তার কোনো সুফল মেলেনি। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও ব্যর্থ। মাঝে মাঝে করপোরেশন অভিযান চালিয়ে তার কেটে দিলেও, তার স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক ঘন্টা থাকে। তার কেটে দেওয়ার পরপরই তা আবার মাথার ওপর লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই তার কাটা এবং লাগানো নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলছে। তারের জঞ্জাল আর সরছে না।
এটা বিটিআরসি, বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের চরম ব্যর্থতা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এর মধ্যে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এসব সমস্যার মধ্যে নগরীর সৌন্দর্যহানির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির তারের জঞ্জাল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরে সবচেয়ে বেশি তারের জঞ্জাল চোখে পড়ে নিউ মার্কেট মোড়, তামাকুন্ডি লাইন, আন্দরকিল্লা, টেরিবাজার, জামালখান, চকবাজার, বহদ্দরহাট, আগ্রাবাদ, ষোলশহর, কাজীর দেউড়ি, ষোলশহর, মুহাম্মদনগর, বাদুরতলা, ষ্টেশন রোড়, মুরাদপুর, হালিশহর বড়পুল, চৌমহনী, পতেঙ্গা ষ্ট্রিল মিলস, বন্দর, বারেক বিল্ডিং, দেওয়ানহাট, দিদার মার্কেট, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, সদরঘাট, জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেইটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কটি এলাকার সড়কের পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিতে।
নিউ মার্কেট ও শাহ আমানত মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আরফিন ও ইকবাল বলেন, দোকানের সামনে প্রায় সময় ডিশ লাইন, ইন্টারনেটের লাইনের তার ঝুলে থাকে। কারও চোখে-মুখে লাগে। অনেক সময় মাটিতে পড়ে থাকে। কারও পায়ে লাগে। এক অস্বস্থিতে আছি। খুঁটিতে কয়েকশত বিশৃঙ্খল অবস্থায় তার। দেখতেও অসুন্দর লাগে। তারগুলো শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার।
ডিশের ফিড লাইন টেকনিশিয়ান জয়নাল বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব বা নির্দিষ্ট খুঁটি নেই, তাই বাধ্য হয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে আমাদের কেব্ল স্থাপন করতে হয়। যদিও এভাবে ব্যবহার করা ঠিক না, তারপরও আমাদের করতে হচ্ছে।’ কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বিদ্যুতের প্রতিটি পিলারে অতিরিক্ত তারে জঞ্জালের সৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো লাইন থাকায় আবর্জনার মতো লাগে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত এই তারের জঞ্জাল কমানো।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে তারের জঞ্জাল কমানো। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এর স্থায়ী সমাধান করতে হলে বিচ্ছিন্নভাবে তার না কেটে নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিয়ে মাটির নিচ দিয়ে তার প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এভাবে ধাপে ধাপে এলাকাভিত্তিক ঝুলন্ত তার মাটির অভ্যন্তরে নিতে হবে। উন্নত বিশ্বের কোনো নগরীতেই মাথার ওপর তারের জঞ্জাল ঝুলতে দেখা যায় না। আমাদেরকেও মাথার ওপর ঝুলন্ত তার সরিয়ে মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post