রোমান আহমেদ, জামালপুর প্রতিনিধি : বোরো ধানের বাম্পার ফলনে খুশিতে মেতে উঠেছিল কৃষকরা। এবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাবও পড়েনি। পাকতে শুরু করেছে বোরো ধান। ইতোমধ্যেই আগাম জাতের ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে৷ বাকি ধানগুলোর জন্য দিন গুনছে কৃষকরা। তবে বাম্পার ফলনেও কৃষকের কপালে ভাজ পড়েছে। বোরো ধানের ক্ষেতে আক্রমণ করেছে মাজরা পোকা। এছাড়াও কিছু জমিতে বেশি আক্রমণ করেছে বাদামি গাছ ফড়িং। যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ২টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে বোরো ধানক্ষেতে ব্যাপক আকারে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এছাড়া ১১টি ইউনিয়নেই দেখা দিছে মাজরা পোকার আক্রমণ। বাদামি গাছ ফড়িং এর আক্রমনের ফলে ধানক্ষেতে খন্ড খন্ড অংশে পুড়াকৃতি ধারণ করেছে।পার্শ্ববর্তী ধান গাছে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। অন্যদিকে মাজরা পোকা ধানের শিশ গোড়া থেকে কেটে দেয়। এর ফলে ধানের শিশ মরে সাদা চিটে হয়ে যায়। কীটনাশক ব্যাবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। এতে বাধ্য হয়ে আধা পাকা ধান কেটে নিচ্ছে কৃষক।
সরেজমিনে মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোঁচা ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে দেখা গেছে বাদামি গাছ ফড়িং এর প্রভাব। এছাড়া আদ্রা,ঝাউগড়া, শ্যামপুর ইউনিয়নের প্রতিটি জমিতে মাজরা পোকার প্রভাব দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার ১৫০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধান ঘরে ওঠার মুহূর্তে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে কৃষকরা লাভবান হবে।
কৃষকরা জানান, পোকার আক্রমণ ঠেকাতে একই জমিতে দুই থেকে তিনবার করে কীটনাশক দেয়া হয়েছে কিন্তু এতে কোন কাজ হচ্ছে না। বাদামী গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) ও মাজরা পোকার পাশাপাশি জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধান বের হওয়ার সময় ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে ফেলছে। এতে করে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সাজা মিয়া বলেন, প্রতিটি ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ধরছে। ধানের শিশ মরে যাইতাছে। আজ যে জায়গায় ধরছে কাল অন্য জায়গায় ছড়াইতাছে। আমি ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু কারেন্ট পোকার কারণে অসময়ে ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে।
ফুলকোঁচা ইউনিয়নের কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, আমি ৫২ শতাংশ জমিতে হিরা১৯ জাতের ধান লাগাইছি। ধান কাটতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এই অবস্থার মধ্যেই পোকায় ধরছে। যেখানে ধরছে সেই ধান গাছ কাইটে দিছি তারপরও আশে পাশে ধান গাছে ছড়ায়। এর থেকে বাচার উপায় জানি না। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, বাদামি ঘাসফড়িং এর বিষযয়ে তারা ইউনিয়ন ও মাঠ পর্যায়ে রোগবালাই প্রতিরোধ ও দমনে নানা কৌশল এবং ওষুধ ব্যবহারের বিষয়ে কৃষকদের ধারণা দিয়েছেন। এছাড়া সকল কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, এটি একটা বীজ বাহিত রোগ। বীজের সাথে যদি মিশে থাকে। যদি একবার ওই ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং হয়ে থাকে তাহলে সেখানে থেকে যায়। আমরা এই বিষয়ে প্রতিটি উপসহকারীদের আলাদাভাবে ট্রেনিং করিয়েছি৷ কি কি ঔষধ ব্যাবহার করা হবে উপসহকারীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষকের মাঝে দেওয়ার জন্য। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কখন কি করতে হবে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায় খোঁজখবর নিচ্ছন। তবে মাজরা পোকা এটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে৷