নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়া জেলা গোয়েন্দা শাখার ৩ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের গোফানগর গ্রামে অভিযানে গেলে ভুয়া ডিবি সন্দেহে তাঁদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে দেড় ঘন্টার প্রচেষ্টায় ডিবি পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ৩টি
মোটরসাইকেল যোগে গোফানগর গ্রামে যান জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু বক্কর সিদ্দিক, সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) নুরুল ইসলাম ও কনস্টেবল মাসুদ রানা। তাঁদের সঙ্গে ছিলো একজন সোর্স। গোফানগর গ্রামের
আদিবাসী পাড়ায় যাবার পর সান্তনা রাণী নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রবেশ করেন। এরপর নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয়ে ২০ হাজার টাকা
চাঁদা দাবি করেন। তাঁদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৫ হাজার টাকা দেন সান্তনা রানী। এনিয়ে উভয়ের মাঝে বাকবিতদন্ডা শুরু হয়। বিষয়টি প্রতিবেশী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নজরে এলে তোপের মুখে পড়তে হয় ডিবি পুলিশ সদস্যদের। এরপর
বাধ্য হয়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীর থেকে নেওয়া ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলে সেখানে পুরো টিমের অন্তত ৬ জন পুলিশ সদস্য থাকে।
অথচ ওইদিন সন্ধ্যায় ৪ জন এসে ৩ জন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছে। টাকা নেওয়ার পর আবারো টাকা ফেরত দেওয়ায়, তাঁরা আদৌ আসল ডিবি পুলিশ কি না?
সেবিষয়ে এলাকাবাসীদের মাঝে সন্দেহ জাগে। তাঁদের সুষ্পষ্ট পরিচয় জানতে চাইলে এক পর্যায়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন তাঁদেরকে আটকে রাখা হয়। এরপর আমরা নিজেরাই থানায় ভুয়া ডিবিকে ধরে রাখার সংবাদ
দিয়েছিলাম। পরে পুলিশ এসে ৩টি মোটরাসাইকেলসহ তাঁদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু বক্কর সিদ্দিক এর মুঠোফোনে কল করা হলে কৌশলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা
বলতে সরাসরি দেখা করতে হবে জানিয়ে কল কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযানে থাকা জেলা গোয়েন্দা শাখার আরেক সদস্য সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই)
নুরুল ইসলাম বলেন, গোফানগরে মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়ার পর নেশাগ্রস্ত অবস্থ্যায় চোলাই মদসহ এক নারীকে আমরা পেয়েছিলাম। তবে তাঁকে আটক করে আনার
মতো পরিস্থিতি ছিলো না। কারোর থেকে চাঁদা দাবী বা আদায় করা হয়নি। কেউ আমাদেরকে অবরুদ্ধ করেও রাখেনি। অভিযোগগুলো মিথ্যে ও ভিত্তীহীন।
মহাদেবপুর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মুহাঃ আসাদুজ্জামান বলেন, গত
বুধবার সন্ধ্যায় গোফানগর আদিবাসী পাড়া থেকে স্থানীয়রা আমাদের মুঠোফোনে কল করে ভুয়া ডিবিকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে জানান। পরে তাৎক্ষণিক বিষয়টি
ওসি ডিবিকে অবহিত করলে তিনি একটি টিম ওই গ্রামে পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। এরপর ঘটনাস্থলে প্রায় দেড় ঘন্টা পর আমরা গিয়েছিলাম। ওসি ডিবিও
এসেছিলেন। পরে ডিবি পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়।
এবিষয়ে জানতে জাইলে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি ডিবি) হাশমত আলী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ডিউটিতে বেশিরভাগ ডিবি পুলিশ সদস্য গত বধবার নওগাঁ জেলার বাহিরে অবস্থ্যান করছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই
অভিযানিক দলের সদস্যদের সংখ্যা একটু কম ছিলো। একটা পক্ষ গোফানগরে অহেতুক ভুয়া ডিবি বলে চিৎকার করে সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে
ঘটনাস্থলে নিজে গিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে সেখান থেকে ডিবি পুলিশ সদস্য ও তাঁদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে এনেছি।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post