চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ ভূমি অফিসের বাইরে দালালের দৌরাত্ম্য। ভূমির কাজ মানেই টাকা, বাড়তি টাকা। সেবাপ্রার্থীর প্রতি কর্মচারীদের অবহেলা। ভ্রুক্ষেপহীন কর্মকর্তা। দিনের পর দিন হয়রানি—ভুক্তভোগীদের কাছে সারা দেশে এই হলো ভূমি কার্যালয়ের সাধারণ চিত্র। যদিও কর্ণফুলী ভূমি অফিসও একসময় দালালের স্বর্গরাজ্য ছিল। কিন্তু অল্প সময়ে সবকিছু বদলে দিয়েছেন এসিল্যান্ড পিযুষ কুমার চৌধুরী।
অথচ ভাবতে অবাক লাগে কয়েক মাস পূর্বেও কর্ণফুলী ভূমি অফিস মানেই ভুমি মালিকদের জন্য আতঙ্ক ছিল । এখানে একটি নামজারি মানে লাখ লাখ টাকার খেলা ছিল । অবৈধ টাকা লেনদেনের হতো। জমির মালিকরা অপেক্ষায় থাকতো কোনদিন একজন ভাল কর্মকর্তা আসবে এ ষ্টেশনে ।
হয়তো তাদের স্বপ্ন পূরণ হলো। সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী এলেন, পাল্টে দিলেন ভূমি অফিসের চিত্র। সেবা প্রার্থীদের বসার কোন জায়গা ছিলো না। কাঠের টুল টেবিলে অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু তিনি আসার পর সম্পূর্ণ অফিসকে সৌন্দর্য বর্ধণ করলেন।
বিসিএস ৩৭তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক অফিসের স্টাফ টু অফিসার থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হয়ে কর্ণফুলীতে যোগদান করেন ২৪ মে ২০২২। যোগদানের পরদিনই ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের সকল কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করে ঘোষণা দেন সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে হবে। এটা ভূমি মন্ত্রীর এলাকা। মন্ত্রীর ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে স্বচ্ছ ভাবে সবাইকে সেবা দিতে হবে। যারা ভূমি অফিসে দালালী করতেন এমন কিছু ব্যক্তি এ ঘোষণায় চাপের মুখে পড়লেও এসিল্যান্ড অনিয়ম দুর্নীতি ঠেকাতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।
যারা ভূমি কার্যালয়ের চিরচেনা দালাল ও জাল দলিল ও পর্চা তৈরী করতেন তারা এখন কোথায়—জানতে চাইলে শিকলবাহা ক্রসিং এলাকার মোঃ মফিজুর রহমান বললেন, দালালদের এখন আর ভূমি অফিসে ঢুকতে দেখা যায় না। শুনেছি অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। দু-একজন এলেও বাইরে দোকানে বসে থাকেন। নয়তো সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুরতে দেখা যায়।
তিনি আরো বলেন, আগে এখানে অনেক দালাল থাকত এবং জমির মালিকরা কাজ করতে আসলে হয়রানির শিকার হতো। কানায় কানায় পূর্ণ থাকত দালাল। এই এসিল্যান্ড আসার পর থেকেই একদম ফাঁকা পড়ে থাকে। এখন ভূমি অফিসে কোন বাড়তি লোক নেই।
কর্ণফুলী ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, নামজারি রিভিউ (মিস কেস) মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। নতুন প্রক্রিয়ায় সেবাপ্রাথীরা মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে তার পরবতী শুনানীর তারিখ জ়ানতে পারবে, ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে যে কোন জায়গা থেকে মিস কেস এর আবেদন করতে পারবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা পুরোপুরি সেবা পাবে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, আমি যোগদান করার ৯ মাস পূর্ন হয়েছে। এই অল্প সময়ে অফিস দালালমুক্ত করেছি, বিনা বাঁধায় সেবা প্রার্থীরা সরাসরি আমার রুমে ঢুকে তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারে। আমি আশা করছি ভূমি অফিস সম্পর্কে সেবা প্রার্থীদের ধারণা অল্প কয়েক মাসেই পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
তিনি আরো জানান, খুব শিগগরই কমিশনার স্যার, ডিসি স্যার ও ইউএনও স্যারের সহযোগীতা নিয়ে দেশসেরা পরিবেশ বান্ধব রেকর্ড রুম তৈরী হবে কর্ণফুলীতে। যাতে অল্প সময়ে গ্রাহককে সেবা দিতে পারি। শুধু তাই নয়, নামজারি ও বিবিধ মামলার শুনানির তারিখ বাদী ও বিবাদীকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমনকি পুরাতন নথি ক্রমানুসারে সাজিয়ে প্রতিটির সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নথিগুলোকে প্রথমা, দ্বিতীয়া ও তৃতীয়া নামের অফিস কক্ষে এমনভাবে সাজিয়েছেন, এখন যেকোনো নথি এক মিনিটের মধ্যে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আগে একটা নথি খুঁজে বের করতেই কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যেত। নথি খোঁজার জন্য কাউকে কাউকে ‘খুশি’ করতে হতো। এখন বিনামূল্য সইমুহুরি নকল তুলতে পারছে যে কেউ।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//