এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সরকারি মেডিকেল অফিসার জামাইকে ফাঁসাতে বিয়ের ২ লাখ টাকার কাবিন গোপন করে ১২ লাখ টাকার ভূয়া কাবিনের মাধ্যমে মামলা করায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু ভূয়া কাবিন করেই ক্ষাম্ত হননি স্ত্রীর পরিবার তারা মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন চাকরিচ্যুত করতে। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের পিতম্বরবসী গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (আরএমও) ডা. শরিফুল ইসলামের সাথে পান্টি ইউনিয়নের পিতম্বরবসী গ্রামের মকছেদ আলী মোল্লার মেয়ে সোনালীর ২০২২ সালের জুলাই মাসে বিয়ে হয়।
এসময় স্থানীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) মো. রহমতুল্লাহ ২ লাখ টাকা দেনমোহর উল্লেখ করে কাবিননামা প্রস্তুত করেন। ডা. শরিফুল মেয়ে পছন্দ না হওয়ায় বিয়েতে রাজি নাহলে মেয়ে পক্ষ চাপ বিয়ে পড়িয়ে দিলেও শরিফুল কাবিনামায় স্বাক্ষর করেননা। ডা. শরিফুলের সাথে বিয়ের ৫ মাসের মাথায় সোনালী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাবার বাড়িতে চলে যান এবং সেখানে অবস্থানের পর একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হয়। পরবর্তীতে তিনি স্বামীর বাড়িতে যেতে রাজি নাহলে দুই পরিবারের অভিভাবক বুঝিয়ে ডাক্তার শরিফুলের তৎকালীন কর্মস্থল ভেড়ামারা নিয়ে যান। এবং দু’মাসের মাথায় সোনালী পূণরায় বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন এবং আদালতে মামলা করেন। মামলায় বিয়ের ২ লাখ টাকার দেনমোহরের বিষয়টি গোপন রেখে মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন টিক্কার অফিস কক্ষে ১২ লাখ টাকার কাবিনে বিয়ে হয়েছে দেখানো হয়।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শরিফুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকে তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হতোনা। তার স্ত্রী অত্যন্ত সন্দেহ প্রবন ও মুখরা হওয়ায় ক্রমেই দুজনের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি হতে থাকে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে গিয়ে ফিরে আসতে না চাইলে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর উভয় পরিবারের মাধ্যমে অনেকভাবে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসার ২ মাসের মাথায় আবার চলে যায় তার স্ত্রী । এবং তার স্ত্রীর চাচা ও চাচী ডাক্তার হওয়ার সুবাদে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় । মামলায় স্ত্রীকে নির্যাতনের যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে তার অনেক আগেই তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যায়। এছাড়াও ওই দিনে তিনি ভেড়ামারা আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছিলেন তার একাধিক প্রমাণ আছে। মামলায় যাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে তিনি কিছুই জানেননা বলে জানিয়েছেন। ভূয়া কাবিনের মাধ্যমে তার কাছ ১২ লাখ টাকা আদায়ের উদ্দেশ্য স্ত্রীর পরিবার মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাকে চাকরিচ্যুত করতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকৃত বিষয় উল্লেখ করে দুই কাজী প্রত্যয়ন দিয়েছেন। স্ত্রীর পরিবার থেকে হুমকি দেওয়ায় তিনি ইতিমধ্যে কুমারখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ও ভূয়া কাবিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
বিষয়গুলো জানতে শরিফুল ইসলামের স্ত্রী সোনালীর বাবার বাড়িতে গেলে প্রথমেই সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন পরিবারের লোকজন। পরবর্তীতে সোনালী জানান, তাকে নির্যাতন করা হতো যেকারণে মামলা করেছেন। ভূয়া কাবিনের বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে গেলেও তার বাবা মকছেদ আলী মোল্লা ২ লাখ দেনমোহর ধার্য্য করে কুমারখালীর পান্টি তার বাড়িতে বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন।
মিরপুর চিথলিয়া ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন টিক্কা জানান, দেনমোহরে যে স্বাক্ষর করা হয়েছে এটা তার নয়। বিয়ে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেনা। এটা জাল ও ভূয়া কাবিননামা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বর পক্ষকে একটি প্রত্যয়ন দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
পান্টি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. রহমতুল্লাহ জানান, ২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের পিতম্বরবসী গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের দিনে বর কাবিননামায় স্বাক্ষর না করায় এবং পরবর্তিতেও স্বাক্ষর না করলে কাবিননামা বাতিল হয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি প্রত্যয়ন দিয়েছেন বলে জানান।
শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন মামলার স্বাক্ষী পোড়াদহের মিলন জানান, সোনালীর ভাই রানার সাথে তার সম্পর্ক আছে। ফোনে রানা তার বোনের বিষয়ে শালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান। কিন্তু তার বোনকে নির্যাতন করা হয়েছে এমন বিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। তাকে না জানিয়েই মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে।
ভেড়ামারা আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কথা বলে জানা যায়, যে তারিখে নির্যাতন দেখানো হয়েছে সেদিন ডা. শরিফুল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেছেন, রোগীর সিরিয়াল সহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে।
স্থানীয় শাহিন ও বিয়ের ঘটক জালাল জানান, কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের পিতম্বরবসী গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বিয়ে হয়। অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত ছিলেন। ২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হলেও সেসময় বর কাবিননামায় স্বাক্ষর করেননি। শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়ে মেয়ে পক্ষ এভাবে বিয়ে দেন।
পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আলম শেখ জানান , বিয়ের দিন তিনি ছিলেননা তবে পরবর্তীতে ছেলে ও মেয়ের পরিবারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলে তিনি কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার এর নিকট গিয়ে ২ লাখ টাকার কাবিনের বিষয়ে জানতে পারেন।

Discussion about this post