জাহিদ হাসান: বর্তমান বিশ্বব্যাপি পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব উপাদানকে সবচেয়ে দায়ী করা হয় তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। পলিথিন ব্যাগের মূল উপাদান সিনথেটিক পলিমার তৈরি হয় পেট্রোলিয়াম থেকে। পলিথিন ব্যাগ তৈরিতে প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে খনিজ তৈলের চার শতাংশ ব্যবহার হয়। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পলিথিন চরম হুমকি। বাংলাদেশের সরকার পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে গত ১লা মার্চ ২০০২ সাল থেকে দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৬(ক) ধারাটি সংযোজন করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোন ব্যাক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজার জাত করে। তাহলে দশ বছর কারাদণ্ড ও দশ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সর্বত্র অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন।
কনজিউমার রাইটস (সিআরবি) ভেড়ামারা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান জানান, পলিথিন একশোর অধিক বছরেও পচন ধরে না এবং মাটির সঙ্গে মিশে না। যার ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার মানুষ ছাড়াও পাখি, জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণী। তাছাড়াও অতি প্রয়োজনীয় পানী ও মাটি মারাত্মক ভাবে দূষণ করে। বিভিন্ন ভাবে মানুষের শরীরে ক্যান্সারের সৃষ্টি করছে। পলিথিন পোড়ালে তার ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটায়।
ভেড়ামারা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, এমন কোনো নিত্য পণ্যের দোকান নেই, যেখানে ব্যবহার হচ্ছে না নিষিদ্ধ পলিথিন। কাগজ কলমে নিষিদ্ধ হলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই যেন ভিন্ন। বাজারের কোথাও ক্রেতা- বিক্রেতার হাতে দেখা মেলেনি পাটের ব্যাগ কিংবা পরিবেশ বান্ধব কোন ব্যাগ। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট সহ পরিবেশ। দুষণের কথা জানলেও খোড়া যুক্তি দিয়ে তা মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষ।
ব্যবসায়িরা জানান, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ব্যাগ না থাকায়, আমরা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে বিকল্প বাজারে ব্যাগ না থাকায় পলিথিন কোম্পানীরা কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা দাম বৃদ্ধি করেছে। সঠিক মনিটরিং ও বিকল্প তৈরি করে পলিথিন বন্ধ করলে ভালো হয়।
ক্রেতারা জানান, নিত্যদিনের বাজার মানেই পলিথিন ব্যবহার। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা সন্তুষ্টপূর্ণ না। ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করছে ও আমাদের পণ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে দিচ্ছে। তাই আমরা নিতে বাধ্য হচ্ছি।
কুষ্টিয়া সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসমান আলী জানান, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রো প্লাস্টিকে পরিণত হয়ে খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফলে ফুসফুস ও কিডনি জনিত রোগ হয়। এছাড়া অতিরিক্ত প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারে মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট ও প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে মনে করি।
ভিশন ইংলিশ মডেল স্কুলের প্রিন্সিপাল জহুরুল ইসলাম জানান, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের ব্যবহার।
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, পলিথিনের মধ্য থেকে বিষ ফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্য দ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। যার ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার মানুষ ছাড়াও পাখি, জীববৈচিত্র্য ও জলজপ্রাণী। পলিথিন মাটির সাথে শত বছরেও মেশেনা। বরং মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টি পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের বর্তমান উদ্দ্যোগকে ব্যবসায়িরা যেন দুর্বলতা না ভাবে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Discussion about this post