Print Date & Time : 13 May 2025 Tuesday 5:13 pm

ভেড়ামারায় পাওয়া লাশের হত্যা রহস্য উদঘাটিত

সিপিসি-১ (কুষ্টিয়া),র‌্যাব -১২ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় খুন হওয়া রক্সি পেইন্ট এর এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। ওই হত্যার সাথে জড়িত প্রধান আসামি সহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে।

এ নিয়ে আজ র‌্যাব ১২ কুষ্টিয়ায় একটি মিডিয়া ব্রিফ করেছে। ওই ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত  ০৩ আগষ্ট ২০২২ সকাল ০৯:৪৫ মিনিটের দিকে ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের গলির পাশে পলিথিনে মোড়ানো একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে ভেড়ামারা থানা পুলিশ।

পরবর্তীতে মৃতদেহটি রক্সি পেইন্ট কোম্পানি লিমিটেড এর কুষ্টিয়া অঞ্চলের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেন এর বলে তার স্ত্রী শনাক্ত করেন। নিহত লোকমান হোসেন গত ০১ আগষ্ট ২০২২ তারিখ সকাল ১০:৩০ ঘটিকার সময় কুষ্টিয়া শহরে তার ভাড়া বাসা হতে কোম্পানির মালের অর্ডার নেওয়া ও বকেয়া বিল আদায়ের জন্য ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে বের হন।

বিকেলে তার স্ত্রী মোবাইল কল দিলে ফোনটি বন্ধ পান। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার প্রেক্ষিতে তার স্ত্রী গত ০২ আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে ভেড়ামারা থানায় একটি জিডি করেন।

লাশটি উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী জিন্নাত আরা টুম্পা বাদী হয়ে ০৩ আগষ্ট ২০২২ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নাম্বার-৬, তারিখ-০৩/০৮/২০২২, ধারা-৩০২/২০১/৩৪। হত্যাকান্ডটির খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। এরপর ওই মামলার আসামিদের গ্রেফতারে র‌্যাব উদ্যোগী হয়ে নজরদারি শুরু করে।  

এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প, র‌্যাব-১২ এর একটি দল তাদের সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় গত ০৭ আগষ্ট ২০২২ তারিখ বিকাল ০৬:৩০ মিনিটে ঢাকা জেলার সাভার এলাকা হতে ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামী ১। মোঃ সোহানুর রহমান সোহান (২২), পিতা-মোঃ দর্পণ আলী এবং ২। মোঃ দর্পণ আলী (৬১), পিতা-মৃত দাউদ খন্দকার @ মতিয়ার রহমান, উভয় সাং-দক্ষিণ রেলগেইট পৌর চাঁদগ্রাম, থানা-ভেড়ামারা, জেলা- কুষ্টিয়া’কে গ্রেফতার করে।

এরপর গ্রেফতারকৃত আসামি সোহানুর রহমান সোহানের দেখানো মতে হত্যাকান্ডের স্থান ‘দর্পণ হার্ডওয়্যার’ এর ভাড়াকৃত গোডাউন বলে নিশ্চিত হয়। সেখান থেকে নিহত এরিয়া ম্যানেজারের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ২নং আসামি মোঃ সোহানুর রহমান সোহান লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহনের কথা স্বীকার করে। তাদের কথায় জানা যায, লোকমান হোসেন দর্পণ হার্ডওয়্যারে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য যায়। দোকানের মালিক মোঃ দর্পণ আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল আউয়াল র‌্যাভেন তার বাবা নিকট পাওয়া বকেয়া টাকা আত্মসাতের জন্য লোকমান হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মতে র‌্যাভেন ছোট ভাই সোহান ভিকটিমকে তাদের গোডাউনে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই প্রান্ত ইসলাম সাব্বির (২১), পিতা- মোঃ শেরেগুল ইসলাম এবং ৪ নং আসামি মোঃ শুভ (২৩), পিতা- মোঃ তাহাজ, উভয় সাং-কাচারিপাড়া, থানা-ভেড়ামারা, জেলা-কুষ্টিয়া অবস্থান করছিল। তারা ভিকটিমকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যাকান্ড সম্পন্ন করে।

হত্যাকান্ডের পরের দিন সকালে সোহান তার বাবা দর্পণ আলীকে বিষয়টি জানায়। দর্পণ আলী সোহানকে মৃতদেহটি গুম করে ফেলতে বলে। ০২ আগষ্ট নিহত লোকমানের খোঁজে তার স্ত্রী দর্পণ হার্ডওয়্যার এ আসলে দর্পণ আলী জানায়, লোকমান আগেরদিন তার দোকানে এসে বকেয়া টাকা নিয়ে চলে গেছে।

একই দিন গভীর রাতে র‌্যাভেন বন্ধু জীবন এবং দর্পণ হার্ডওয়্যার এর কর্মচারী তুহিন এর পাহারায় ভিকটিম এর মৃতদেহ ভেড়ামারা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের গলিতে ফেলে রাখে।

০৩ আগষ্ট ২০২২ তারিখ সকালে পুলিশের প্রেফতার এড়াতে দর্পণ আলী তার ছোট ছেলে সোহানকে নিয়ে বাড়ি থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।