ভুয়া আইডি কার্ডে চাকুরি
জাহিদ হাসান, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নকল আইডি কার্ড ও জন্ম সাল পরিবর্তন করে আনসার ভিডিপির চাকুরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মোঃ বাহার আলীর ছেলে মোঃ রাজীব আলীর নামে নকল আইডি কার্ড (৫০০৫২৪১৮৩২২৭) ও জন্ম সাল পরিবর্তন করে চাকরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ ২০২৪ সালের ভেড়ামারা পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড দলনেতা সার্কুলারে নিয়োগের জন্যে মোঃ রাজীব আলী উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমারকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে তারই পরামর্শে ভোটার আইডি কার্ড নকল করে ধরমপুর ইউনিয়ন থেকে পরিবর্তন করে ভেড়ামারা পৌরসভা ফারাকপুরের বাসিন্দা দেখিয়ে আইডি কার্ড (৭৩০৬০৯৪৪৩৯) তৈরি করে। কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় ফারাকপুরে তাদের কোন জমি বা বসতবাড়ি নেই। তরুণ কুমারের নানা অপকর্মের সহযোগী হিসেবে রয়েছে একটি টিম।
আরো জানা গেছে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এই উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমারের নামে। উপজেলা আনসার কর্মকর্তা ও ভিডিপি দল নেতাদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় তরুণ কুমার। এছাড়াও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তিদের জাল সনদ দিয়ে ভিডিপি সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্বে তালিকাভুক্ত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জানান, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত করতে ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে মাথাপিছু এক থেকে দুই হাজার টাকা অগ্রিম জমা নেওয়া হয়। গত জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম ঘটে নাই।
ভুক্তভোগী সাধারণ সদস্য জানান, আমি ভেড়ামারা কলেজে পড়াশোনা করি। বন্ধুদের কথায় পকেট খরচের টাকার জন্য ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব নেয় আনসার ভিডিপির সাধারণ সদস্য হিসেবে। কিন্ত সেখানে আনসার ভিডিপি নেতারা আমাকে চুক্তিবদ্ধ করে তালিকায় নাম দিতে প্রথমে নগদ ১০০০/ (এক হাজার) টাকা দিতে হবে এবং রকেটে টাকা আসা মাত্রই বাকি ১০০০/ (এক হাজার) টাকা দলনেতাকে দিতে হবে।
একজন রাজমিস্ত্রী জানান, আমি রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। সেখানে আমি প্রতিদিন ৫০০/ (পাঁচ শত) টাকা পায়। কিন্তু একদিন ডিউটি করে কিছু বেশি টাকা পাওয়ার আশায় আনসার ভিডিপির সাধারণ সদস্যের তালিকাবদ্ধ একজন ব্যক্তির স্থানে নির্বাচনে ডিউটি করেছি। ডিউটি শেষে ১৫০০/ (পনের শত) টাকা পেয়েছি।
রাজীবের পিতা বাহার আলী জানান, ধরমপুর দক্ষিণ ভবানীপুর আমার বসতবাড়ি আছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে এখানেই থাকি। ফারাকপুরে জমি কিনেছি। শুনেছি আনসার ভিডিপি চাকুরির জন্য ছেলে চেষ্টা করছে।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমার জানান, কোন সদস্যের টাকা অন্য কেউ নেওয়া সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেক সদস্যদের টাকা তাদের নিজ রকেট একাউন্টে পাঠানো হয়। আর রাজীব আলীর কাগজপত্র বর্তমানে পুলিশ ভেরিফিকশনে রয়েছে। আমি কোন টাকা নেই নি।
ধরমপুর ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম জানান, বাহার আলী ও রাজীব আলী আমার ওয়ার্ড দক্ষিণ ভবানী পুরের বাসিন্দা এবং এখানকার ভোটার।
পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ড কমিশনার ফিরোজ আলী জানান, পৌরসভা ফারাকপুরের ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তি আমার অপরিচিত। আমার ওয়ার্ড ফারাকপুরে যে বাহার আলী আছে তার ছেলের নাম জিয়া এবং পৌরসভার ভোটার আইডি কার্ডে হোল্ডিং নং, সড়ক নাম্বার ও ফারাকপুরের ভোটার এলাকা কোড ৪৬২ উল্লেখ্য থাকবে। যা রাজীবের কার্ডে নেই।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল তথ্য প্রদান কিংবা জাল ও একাধিক পরিচয় পত্র বহন করলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০০৯ এর খসড়া অনুসারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারান্ড ও ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা হতে পারে।
টি//দৈনিক দেশতথ্য//২২ সেপ্টম্বর,২০২৪//