আজ (৬ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ সময় ইলিশ আহরণ, ক্রয় বিক্রয়, বিপণন, মজুদ ও পরিবহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারনে সাগর থেকে ফিরছে বরগুনার জেলার সকল সমুদ্রগামী জেলেরা।
উৎপাদন বাড়াতে এবং মা ইলিশ রক্ষা করতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বৃহস্পতিবার(০৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথাও জানান হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে আজ সকাল থেকেই জাল ও ফিশিং ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পাথরঘাটার জেলেরা।
এদিকে জেলেরা জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এ চার মাস ইলিশ শিকারের প্রধান মৌসুম। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঘূর্ণিঝড়সহ বেশ কয়েকটি নিম্নচাপও ছিল। তাই অল্প কিছুদিন ইলিশ শিকার করতে পারলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা। নিষেধাজ্ঞার সময় বরগুনা উপকূলের প্রায় দেড় লাখ জেলে বেকার হয়ে পড়বেন। তাই পরিবার চালাতে চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
বরগুনা সদরের খাকবুনিয়া নিবাসী সমুদ্র গামী জেলে হারুন মৃধা বলেন,এমনিতেই এই মৌসুমে আমরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ পাইনি। এরপরে বিভিন্ন সময়ের সমুদ্রে নিম্নচাপে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। আমাদের সমুদ্রগামী জেলেদের বাংলাদেশ সরকার যাতে বিজিএফ চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
সাগর থেকে ফেরা তালতলী উপ মৎস কেন্দ্রে ফিরে আসা কয়েকজন জেলেরা বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাল থেকে আর সাগরে যেতে পারব না। এ ২২ দিন কোন আয় ইনকাম হবেনা। শুধু চাল দিয়েই তো আর পেট চলেনা, চালের সাথে আরও অনেককিছুর দরকার আছে। সবমিলিয়ে এমনিই আমরা ঋণগ্রস্ত। তার উপর এই ২২ দিনে ধার দেনা করে চলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা পেলে আমাদের সংকট দূর হতো।
বরগুনা মৎসজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সকল ট্রলার মালিকরা তাদের মাঝি ও জেলেদের ঘাটে ফিরতে বলেছেন। অনেক ট্রলার জেলেদের নিয়ে ইতিমধ্যে ঘাটে পৌছে গেছে। বাকি ট্রলারগুলো পথে আছে, রাত ১২ টার আগেই সবাই পৌঁছে যাবে। সাগর থেকে আসা এসব ট্রলারগুলোকে বিএফডিসি সংলগ্ন খালে নোঙর করে রাখা হবে।
বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, কোন অসাধু জেলেরা যাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য না করতে পারে সেজন্য এই অবরোধ সফল করতে নৌ বাহিনী,জেলা মৎস অধিদফতর, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সহ মোট ১১ টি টিম কাজ করবে।২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলেদের মাছ না ধরায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন যায়গায় মাইকিং করা হয়েছে। উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হবে। তবে এ সময় জেলেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫-১৮ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের মতো এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//অক্টোবর ০৬,২০২২//

Discussion about this post