মোঃ রাসেল,বরগুনা: মাছের সুষ্ঠ প্রজনন, সামুদ্রিক মৎস সংরক্ষন ও উৎপাদনের লক্ষে আজ শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে টানা ৬৫ দিনের জন্য সারাদেশে মৎস আহরনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার সময় সামুদ্রিক মাছ আহরণ, ক্রয় বিক্রয়, বিপণন, মজুদ ও পরিবহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারনে সাগর থেকে ফিরছে জেলার সকল সমুদ্রগামী জেলেরা। যারা এখনও উপকুলে ফেরেনি তারা আজ মধ্যরাতের আগে ঘাটে ফিরবে।
উৎপাদন বাড়াতে এবং সামুদ্রিক মাছ রক্ষা করতে ও মাছের সুষ্ঠ প্রজননের লক্ষে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
আজ সকাল থেকেই জাল ও ফিশিং ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পাথরঘাটার জেলেরা। অনেক ট্রলার মালিক ট্রলার মেরামত বা রং করার জন্য ট্রলার গুলোকে ডকইয়ার্ড এ তুলেছেন।
বরগুনা জেলা মৎস অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে বরগুনার ২৭ হাজার ২৭৭ জন জেলেকে ১ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিনে নিবন্ধিত প্রতি জেলে পাবেন ৮৬ কেজি করে চাল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে
এদিকে জেলেরা জানান, মৎস শিকারের প্রধান মৌসুম এখন শুরু হবে এর মধ্যে কয়েকদিন ঘূর্ণিঝড় মেখার কারনে মাছ শিকার করতে গিয়ে আবার সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে। তাই অল্প কিছুদিন সামুদ্রিক মাছ আহরন করতে পারলেও লোকসানের মুখে পড়েছে জেলে ও ট্রলার মালিকরা। নিষেধাজ্ঞার সময় বরগুনা উপকূলের প্রায় দেড় লাখ জেলে বেকার হয়ে পড়বেন। তাই পরিবার চালাতে ভিজিএফ চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
বরগুনা সদরের খাকবুনিয়া নিবাসী সমুদ্র গামী জেলে সোহেল মৃধা বলেন, আমাের মাছের মৌসুম শুরু এখন থেকে এর মধ্যেই আবার ৬৫ দিনের অবরোধ।বিভিন্ন সময়ের সমুদ্রে নিম্নচাপ ঘুর্ণিঝড় এ আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। আমাদের সরকার যাতে বিজিএফ চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
সাগর থেকে ফেরা তালতলী উপ মৎস কেন্দ্রে ফিরে আসা কয়েকজন জেলেরা বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাল থেকে আর সাগরে যেতে পারব না। এই ৬৫ দিন কোন আয় ইনকাম হবেনা। শুধু চাল দিয়েই তো আর পেট চলেনা, চালের সাথে আরও অনেককিছুর দরকার আছে। সবমিলিয়ে এমনিই আমরা ঋণগ্রস্ত। তার উপর এই ৬৫ দিনে ধার দেনা করে চলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা পেলে আমাদের সংকট দূর হতো।
বরগুনা মৎসজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সকল ট্রলার মালিকরা তাদের মাঝি ও জেলেদের ঘাটে ফিরতে বলেছেন। অনেক ট্রলার জেলেদের নিয়ে ইতিমধ্যে ঘাটে পৌছে গেছে। বাকি ট্রলারগুলো পথে আছে, রাত ১২ টার আগেই সবাই পৌঁছে যাবে। সাগর থেকে আসা এসব ট্রলারগুলোকে বিএফডিসি সংলগ্ন খালে নোঙর করে রাখা হবে।
বরগুনা জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, কোন অসাধু জেলেরা যাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য না করতে পারে সেজন্য এই অবরোধ সফল করতে নৌ বাহিনী,জেলা মৎস অধিদফতর, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সহ মোট ১১ টি টিম কাজ করবে।৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলেদের মাছ না ধরায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন যায়গায় মাইকিং করা হয়েছে। উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হবে। তবে এ সময় জেলেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post