Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 7:19 pm

মনপুরার প্রাচীন বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়নি শহীদ মিনার

মোঃ ছালাহউদ্দিন,মনপুরা(ভোলা) সংবাদদাতা: মনপুরায় ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন একটি বিদ্যালয়ের নাম ৬নং কাউয়ারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৯৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মান হয়নি। ফলে বিকল্প শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। বর্তমানে স্কুলে ৫ জন শিক্ষক আছেন। ২৭২ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আসছে। কাউয়ারটেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষের টেবিলের উপর কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শিক্ষক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দিতে দেখা গেছে।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীর জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। ভাষা সৈনিকের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনে মনপুরায় ৪৩টি প্রাথমিক, ৮টি মাধ্যমিক ও ৬টি মাদ্রাসায়  নেই কোন শহীদ মিনার। শিক্ষকদের উদ্যোগে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলাগাছ কিংবা কাগজ বা প্লাস্টিক দিয়ে বিকল্প শহীদ মিনার বানিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মাদ্রাসায় কোন শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালি ভাষা প্রেমিদের মাঝে আসে। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় শহীদ মিনারে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানেনা ২১শে ফেব্রুয়ারি কেন পালন করা হয়। মাতৃভাষা দিবস কি?

একুশের চেতনাকে উজ্জীবিত করতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের দাবি করছেন সচেতন মহল। কোমলমতি শিক্ষার্থিদের একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা শিখাতে হবে। শহীদ মিনার প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে নির্মান না হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারিসহ মুক্তিযুদ্ধে চেতনাই ভুলে যাবে।

এব্যাপারে কাউয়ারটেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বেগম জানান, শহীদ দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অধির আগ্রহে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাই।  কিন্তু শহীদ মিনার না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও পারিনা। শহীদ মিনার না থাকায় স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একই স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী হাফছা জানায়, শহীদ মিনার নির্মানের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতার বাস্তব ইতিহাস জানতে চাই।

কাউয়ারটেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের –শিক্ষক পিয়ারুননেছা লিপা  জানান, স্কুল প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি  শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করছি। সরকার যদি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে দিত তাহলে একুশ ফেব্রুয়ারিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করা সহজ হতো।

কাউয়ারটেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বীকৃতি রানী দাস জানান, শহীদ মিনার নির্মানের জন্য অনেকবার দাবী করছি। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বিকল্প শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য সরকারের পরিকল্পনা আছে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা বলেন, ভাষা সৈনিকের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনে প্রতিটি  স্কুলে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। আমি এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করব।

দৈনিক দেশতথ্য//এল//