Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 10:26 am

সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর মৃত্যুবার্ষিকী

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি:
মহান ভাষা সৈনিক, সাংবাদিক, প্রতিথযশা রাজনীতিক, খ্যাতিমান আইনজীবি ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর আজ ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খুলনার পাইকগাছায় এনতাজ আলী স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর ৭ম মৃত্যু বার্ষিকীতে মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল ১০ টায় পাঠাগার প্রাঙ্গনে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ্যাড, জিএ সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক শেখ রুহুল কুদ্দুস, শেখ সোহরব হোসেন, শেখ আব্দুল আজিজ, শেখ ফারুখ আহম্মেদ ও গ্রন্থগারিক কল্লোল মল্লিকসহ অন্যান্যরা।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ১৯২৮ সালের ২৮ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত শেখ এনতাজ আলী এবং মৃত কাজী গোলসিআরা বেগম তাঁর মা।
১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে তিনি দৌলতপুরস্থ জনপদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিন্দু একাডেমীর শিক্ষার্থী ছিলেন। তখন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ছাত্র সংগ্রাম ও ছাত্র ফেডারেশন হিন্দু একাডেমীতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চলাকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে খুলনায় জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি। 
শেখ রাজ্জাক আলী ১৯৪৫ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়ের প্রতিষ্ঠিত আরকেবিকে হরিশচন্দ্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৪৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও ১৯৫৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৩ সালে দি ডেইলী পাকিস্তান পোস্ট পত্রিকার সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে দি ডেইলী পাকিস্তান অবজারভারে চীফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে আইনজীবী হিসেবে যোগদেন খুলনা জেলা আদালতে। ১৯৬৫ সালে খুলনা ল’ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর তিনি উপাধ্যক্ষ হিসেবেযোগদানের পর ১৯৬৮-১৯৯১ পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮-৭২ পর্যন্ত ন্যাপ ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত জাসদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
১৯৬৪ সালে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ৭২ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রতিনিধি হিসেবে হাসনাবাদ ও বসিরহাট ক্যাম্পে যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা সেবা মনিটরিং করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি কারাবন্দি হন।
১৯৭৮ সালে মার্কসবাদ দর্শন ত্যাগ করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৪-৮৫ ও ৮৫-৮৬ সালে যশোরে অবস্থিত হাইকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন।
১৯৭৮-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭৯-৯৬ পর্যন্ত খুলনা জেলা বিএনপি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২-১৯৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র মনোনয়নে খুলনা-৬ আসন, ১৯৯১-১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আইন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৯১ সালের ১২ অক্টোবর পঞ্চম সংসদে স্পীকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
এর আগে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। ১৯৯২ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু স্পীকার নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। ২০০৬ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে এলডিপি প্রতিষ্ঠাকালীণ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
মহিলা আলিয়া মাদ্রাসা, পাইকগাছা ডিগ্রী কলেজ, সবুরন নেসা মহিলা মহাবিদ্যালয়, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজি ফয়েজউদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পশ্চিম টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগমারা শহিদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাইকগাছা শহিদ জিয়া বালিকা বিদ্যালয়, শিরোমনিস্থ খুলনা চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন তিনি।
খুলনার এম এম সিটি কলেজ, সুন্দরবন কলেজ ও পাইওনিয়ার মহিলা মহাবিদ্যালয় সরকারিকরণে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৯২ সালে তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে খুলনা ফাউন্ডেশন। সুন্দরবন মহিলা মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ বেগম মাজেদা আলী তাঁর স্ত্রী। প্রসঙ্গত, পাইকগাছা উপজেলা সদরে সিনিয়র সহকারী জজ ও থানা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থায়ীকরণে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। ২০১৫ সালের ৭ জুন তিনি ইন্তেকাল করেন। পাইকগাছার হিতামপুর পৈত্রিক ভিটায় তাঁর দাফন হয়।

আর জে//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ৬,২০২২//