মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্ত্রীকে তালাক দিলেন প্রাণীসম্পদ অফিসের এক কর্মকর্তা স্বামী।
তালাকের নোটিশ পেয়ে পাঁচ মাসের কন্যাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে অনশন যান স্ত্রী। এ ঘটনার পর বাড়ি তালাবদ্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন স্বামী ও তার পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভুঙ্গবাড়ি এলাকায়।
ওই কর্মকর্তা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার ভুঙ্গাবাড়ি এলাকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে নাহিদুল ইসলাম (২৯)। তিনি গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের সম্পসারণ কর্মকর্তা।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে দুই পরিবারের অসম্মতিত্বে নাহিদুলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাথান এলাকার হারুন অর রশিদের মেয়ে নুসরাত জাহানের (২৭) বিয়ে হয়। পরে নুসরাত বাধ্য হয়েই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকায় একটি চাকরি নিয়ে স্বামীসহ বসবাস শুরু করেন। এরপর তার বেতনের এক অংশের টাকায় লেখাপড়া ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরিক্ষা দেন নাহিদুল। এরই মধ্যে তাদের সংসারে আসে অহী ইসলাম নামে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। গত ১ মার্চ গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের সম্পসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন নাহিদুল। ওই কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবনতি ঘটে। গত দুই মাস আগে মাতৃত্বকালীন ভাতা ৩০ হাজার টাকা পান স্ত্রী নুসরাত। ওই টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন ওই কর্মকর্তা। কিন্তু টাকাগুলো মেয়ের জন্য ব্যাংকে রাখার কথা বললে স্ত্রী নুসরাতকে নানা ধরণের নির্যাতন করে আসছিলেন নাহিদুল। এক পর্যায় তিনি কৌশলে মাস দুয়েক আগে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি গোয়ালবাথান পাঠান। আর কোনো খোঁজ-খবর রাখেনি স্বামী নাহিদুল। গত ১৩ আগস্ট স্ত্রীকে তালাক দেয় ওই কর্মকর্তা। এর কয়েকদিন পর তালাকের নোটিশ পেয়ে ভেঙ্গে পড়েন নুসরাত। গত শনিবার থেকে একাধিকবার তার পাঁচ মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে তালাকের প্রতিবাদে নুসরাত স্বামীর বাড়িতে অনশনে যান।
অনশনরত নুসরাত জাহান বলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে সর্ম্পকের অবনতি হলে আমাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন স্বামী নাহিদুল। কর্মস্থলে কোয়ার্টার পাওয়ার কথা বলে আমাকে নিয়ে যান এবং একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে শিশু কন্যাসহ আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আর কোনো খোঁজ-খবর না রেখে হঠাৎ করেই আমাকে তালাকের কাগজ পাঠান নাহিদুল। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেছে।
মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত ওই কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের সম্পসারণ কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম জানান, এ নিয়ে তার সাথে জামেলার সৃষ্টি হয়। তবে আমার ও পরিবারের কথা শুনে না বলে তাকে তালাক দিয়েছি।
এব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ ইউসুফ হাবিব জানান, এটা উনার পারিবারিক বিষয়। এ বিষয় নিয়ে ওই প্রকল্পের পরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ দিলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Discussion about this post