Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 1:37 pm

মানসিক রোগ হলে কি করবেন তা জেনে নিন

সব রোগেরই উপসর্গ আছে। এটা কেউ বুঝতে পারে, কেউ পারেনা। মানসিক রোগ তেমনই একটা বিষয়। এই রোগ হলে অন্যেরা ঠিকই বোঝে। বোঝেন না রোগী নিজে।

ভালো করে লক্ষ্য করলেই দেখবেন কিছু লোক হঠাৎ রেগে যায়। আপনজন, সহকর্মী, অধিনস্তদের অকারণে যন্ত্রণা দেয়। বিনা কারণে কাউকে প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে করে। রেগে গিয়ে নিজের কিংবা অন্যের ক্ষতি করে।
যা চেলাম তা পেলাম না বলে নিজেকে বেচারা মনে করাও মানসিক রোগের লক্ষণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমাজের প্রায় ৬০ ভাগ লোক এতে আক্রান্ত। এর ১০ ভাগ চিকিৎসা নেয়। আর ১০ ভাগ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। চিকিৎসা নিতে পাবনার হেমায়েতপুর মেন্টাল কিংবা কোন মানসিক হাসপাতালে গেলে ক্যারিয়ার নষ্ট হবে। জানা জানি হলে সন্তানের বিয়েসাদিতে অসুবিধা দেখা দিবে। পাগলের বংশ কিংবা পাগলের বাড়ি বলে আখ্যায়িত হলে মান সন্মান চলে যাবে। এসব ভেবে ৪০ ভাগ লোক চিকিৎসা নিতে যায়না।

একারণে অনেকের সংসারেই লেগে থাকে অশান্তি। এরা অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, ভাংচুর করে, অঙ্গ কেটে নিজের ক্ষতি করে। আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ক্ষেত্র বিশেষে আপনজনদের মেরে ফেলতেও দ্বিধা করেনা।
অনেকেই জানেননা যে, রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা নগরে “মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল” নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে অত্যান্ত কম খরচে ঘুষ-ঘাস ছাড়াই ভাল চিকিৎসা মেলে।

পরিচিত একজন লোক চাকরি হারিয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর সে সেলফ হার্ম ও আত্মহত্যার চেষ্টা করতো। বাড়ির লোকদের শত্রু মনে করে আক্রমণ করতো। তারা পারিবারিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সারার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে হাসপাতালে যায়। সেখানে চাকচিক্য না থাকায় ভর্তি না করেই ফিরে আসে দুইবার। পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার পর আমার স্মরণাপন্ন হয়।

তাকে মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার আরএমও একজন মহিলা ডাক্তার। তাঁর দেমাগী আচরণ আমাকে হতাশ করে। তারপরও প্রয়োজন বাধ্য করায় কেবিন না পেয়েও দিন প্রতি ২৮০ টাকার পেয়িং বেডে ভর্তি করায়। সেখানে তাদের কাউন্সেলিং দেখে অভিভূত হই। বাড়তি টাকা না পেয়েও সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা এমন সেবা করে তা না দেখে বিশ্বাস করা অলিক। ১০ দিনে আমার দৃষ্টিতে রোগী সুস্থ হলেও ডাক্তার বলল হয়নি।

বড়লোকের ছেলে এসি নেই, টিভি নেই, মোবাইল ও ইন্টারনেট নেই, নেই ভাল বাথরুম। তাই রোগী বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। বাধ্য হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ না শুনে তাকে বাড়ি আনা হল। তারা ওষুধ লেখে দিল। তাকে উত্যক্ত না করার পরমর্শ দিল।

সেই রোগী এখন সুস্থ্য। ভাল হয়ে গেছে তার আচরণ। এজন্য ১০ দিনে হাসপাতালের বিল হয়েছিল মাত্র ২৭৮০ টাকা। ভাবতে পারেন মানুষ কত কম টাকায় কতবেশি সেবা পেতে পারে!

প্রশ্ন হচ্ছে, ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসারসহ নানা ধরনের রোগের টেস্ট কিংবা চিকিৎসা করাতে যদি সমস্যা না হয় তবে এ ক্ষেত্রে হবে কেন?
সুখের জন্য মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। অন্য রোগের চেক আপ করলেই হবে না। বছরে অন্তত একবার মানসিক চেক আপ করানো জরুরি। তা করানো হচ্ছে না বলেই গানিতিক হারে বাড়ছে সামাজিক পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অশান্তি। এর জেরে ঐষির হাতে খুন হয়েছেন তার বাবা-মা। বাংলামোটরে পিতা মেরেছে সন্তানকে। ভিকারুননিসার অভিযুক্ত শিক্ষকও এর বাইরে না।

পরামর্শঃ হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভয় বা লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই। নিজেদের চেনা জানার মধ্যে এমন কেউ থাকলে তাকে চিকিৎসক পর্যন্ত নিয়ে যান। বাংলাদেশে এই রোগের যথেষ্ট ভালো চিকিৎসা আছে।এব্যাপারে দ্বিধা করলে নিজের বা অন্যের প্রাণ হয়ে উঠতে পারে খুবই বিপজ্জনক।

উদাহরণঃ লোক লজ্জার ভয় না করলে ঐষির হাতে বাবা মায়ের প্রাণ বিসর্জন হয়তো বা যেত না।