এনামুল হক কুষ্টিয়া ঃ
জুলাই গন অভ্যুথানের ১১ মাস অতিবাহিত হলেও আওয়ামীলীগের দোসর জাসদ নেতা মিজানুর রহমান’র হাতেই এখনো জিম্মি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আদর্শ ডিগ্রী কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টায় মোটা অংকের টাকা উড়িয়ে এখনো সব কিছু নিয়ন্ত্রন নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রমুলক তৎপরতা চালানো, শিক্ষার মানোন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করা এবং জোর করে অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করার অপচেষ্টা সহ বিস্তার অভিযোগ উঠেছে। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র অভিভাবক সহ সকলের দাবী, ফ্যাসিষ্ট’র দোষরদেরশা? স্তি নিশ্চিত করে আদর্শ ডিগ্রী কলেজ কে নতুন করে প্রান দিতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে কলেজের হারানোর গৌরব।
ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-২। ২০০৯ সাল থেকে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এই দুই উপজেলায় আওয়ামীলীগের থেকে অনেক বেশি দাপট ছিল জাসদ’র। ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান জাসদ রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বাগিয়ে নেন চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সহ-সভাপতির পদ। সেই সুবাধে আওয়ামীলীগ নেতা ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমুল আলম কে সরিয়ে ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করে নেন মিজানুর। দীর্ঘ সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার সুযোগ না থাকলেও নানা তালবাহানা আর জাসদ নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তিনি ছিলেন বহাল তবিয়তে। দায়িত্ব পালন করেছেন একটানা সাড়ে ৮ বছর। ৩ মাস করে অন্যদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব দিয়ে কৌশলে তিনিই আবার ফিরেছেন স্বপদে। দুই মেয়াদে আরো ৪ মাস অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিগত ১৬ বছরে কলেজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস, কলেজের অর্থ সম্পদ পকেটস্থ করে লুটপাট, বড় বড় গাছগুলো বিক্রি করে টাকা আত্মস্বার্থ, শিক্ষক নিয়োগ সহ প্রায় ১ কোটি টাকা লোপাট, কলেজের আবকাঠামোগত উন্নয়নের অর্থ আত্মস্বার্ত কয়েক কোটি টাকার বিস্তর অভিযোগ উঠে। কলেজের শিক্ষকদের দাবী, কলেজ থেকে লোপাটের বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মস্বার্থ করে তিনি ফ্যাসিজম প্রতিষ্টার কাজে ব্যায় করেছেন। এই জন্য কলেজের টিউশন ফিস সহ শিক্ষকদের অধিকারের টাকাও পাননি শিক্ষকরা।
৫ অগাষ্ট আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে গাঁ ঢাকা দেয় মিজানুর। এরপর রাতারাতি ভোল পাল্টে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে ৭ অগাষ্ট আবারো অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করে নেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে ১৯ অগাষ্ট বিতাড়িত হন ফ্যাসিষ্টের সহযোগী মিজানুর। ২০ অগাষ্ট থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব নেন ক্লিন ইমেজের শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা মোঃ শামসুজ্জোহা।
আদর্শ কলেজের প্রভাষক শামসুন্নাহার জানিয়েছেন, ফ্যাসিষ্ট মিজানুর রহমান’র আশংকা, ফ্যাসিষ্ট আমলের ১৬ বছরের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, লুটপাটের তদন্ত করে তাকে চাকুরিচ্যুত করবেন। লুটপাট করা অর্থও তিনি ফিরিয়ে এনে কলেজ উন্নয়নে ব্যায় করবেন বর্তমান অধ্যক্ষ। এমন আশংকা থেকেই শামসুজ্জোহা’র কে সরিয়ে দেওয়ার মিশনে নামেন।
কলেজের প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি কে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে গত ৯ মার্চ জোর করে অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করেন মিজানুর। ১ ঘন্টা চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালনের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। পরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি আর অদ্যবধি কলেজে আসেন নি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুজ্জোহা জানিয়েছেন, ২৩ বছর শিক্ষকতা করছি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব নেওয়ার কারনেই ফ্যাসিষ্টের সহযোগী এবং দোষররা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এসএসসি সহ সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং কম্পিউটার শিক্ষার ভেরিফায়েড সার্টিফিকেট এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষন কোর্সে সান্ধ্যকালীন ব্যাচে অংশগ্রহনের অনুমোদন কপি সহ শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, আমার কম্পিউটার শিক্ষার সার্টিফিকেট জাল এমন অভিযোগ তুলে আমাকে বিব্রত করেছে। আমার যোগদান ২০০২ সালে। ফ্যাসিষ্ট মিজানুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ২০১৪ সাল থেকে। আমার সাটিফিকেট জাল হলে তিনি সে সময়ই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য //