২০০৬ থেকে ২০২৪ সনের ৪ আগষ্ট পর্যন্ত গায়েবি মামলা হয়েছে ২৭ টি। তার পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের নামে হয়েছে ৯৭ টি গায়েবি মামলা
দেশতথ্য রিপোর্ট :
মিরপুরে অতি পরিচিত একটি নাম রহমত আলী রব্বান। মিরপুরে বিএনপি মানেই রব্বান। আর রব্বান মানেই বিএনপি। রব্বানকে চেনেনা বা জানেনা এমন লোক নেই বললেই চলে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে চুড়ান্ত বিজয়ের একদিন আগে অর্থাৎ ৪ আগষ্ট রাত ৯ টায় তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানার সুফল ও প্রতাপ দারোগা। থানায় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কামারুলকে ভিডিও কলে রেখে নির্যাতনের দৃশ্য দেখানো হয়।
একই তারিখ রাত ১২ টার পর আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল আলম হানিফ এর নির্দেশে তাকে সদর থানা নিয়ে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলে হানিফকে দেখানো হয়।
৫ আগষ্ট সকালে কুষ্টিয়া সদর থানা আক্রমণ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। সে সময় থানায় আটক রব্বান সহ অন্যান্যদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
২০০৬ সাল থেকে থেকে শুরু করে ২০২৪ সনের ৪ আগষ্ট পর্যন্ত তার নামে গায়েবি মামলা হয়েছে ২৭ টি। তার পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের নামে ৯৭ টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, তার ছোট ভাই মিরপুর পৌর বিএনপির সেক্রেটারি ইব্রাহিম আলীকে ক্রস ফায়ার দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের নির্দেশে ধরে নিয়ে গেছে বেশ কয়েকবার। উচ্চ পর্যায়ে থাকা আত্মীয়স্বজনদের প্রচেষ্টায় সে রক্ষা পেয়েছে। ২০০৬ সালের পর থেকে তাকে ৩৬টি মামলার আসামী করা হয়েছে।
ছোট ভাই ওষুধ ব্যবসায়ী জাহেদ আলীকে অসংখ্যবার মারধর করে জখম করেছে। তার নামে ০৫টি গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে।
চাচাতো ভাই জহুরুল ইসলামকে কুপিয়ে চিরজীবনের মতো পঙ্গু করে দিয়েছে। তারপরও তার নামে ০৮ টি মামলা দিয়েছে।
চাচাতো ভাই বাবলুর নামে ০৫টি গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে।
ভাগ্নে রফিকুল ইসলামকে বহুবার মারধর করেছে। তার নামে ০৪ টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।
ছোট ভগ্নিপতি ছালামের নামে দুটি মামলা দেওয়া হয়েছে।
ভাগ্নে সুমনের নামে ০৪ টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। ভাগ্নে নাজিমের নামেও ০৩টি গায়েবী মামলা দেওয়া হয়েছে।
ভাতিজা আমানুর রহমান আজিমকে মারধর করা হয়েছে বেশ কয়েকবার।
ভাতিজা মধুর নামে ০২টি, ভাস্তে জামাই রেজাউলের নামেও ০৩ টি মামলা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির এই ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতার পরিচিতি এক দিনে আসেনি। ১৯৮৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিনি বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত। ৩৪ বছর আগে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে মিরপুর থানা ছাত্রদলে কর্মী হিসেবে রাজনীতির হাতে খড়ি নেন।
১৯৮৮ সালে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় জীবনে প্রথম আসামী হন। ওই মামলায় তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন। ওই সনেই তিনি মিরপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৮৯ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনী মামলায় আবারও গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।
১৯৯৪ সালে তিনি মিরপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালে বিএনপির সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগেই বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী নিরব হয়ে যায়।
রব্বান তখনও সরব থাকায় বিএনপির ক্ষমতা ছাড়ার দিন বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৯৭ সালে মুক্তির পাওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাংচুরের মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯৮ সালে তিনি মিরপুর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সনে আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুরের মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর মিরপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত থানা বিএনপির অফিস আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ওইদিন প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। এতে ২/৩ জন লোক মারা যায়। সেই মামলায় তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। এরপর তিনি টানা এক বছর বিনা বিচারে কারাগারে আটক ছিলেন।
রহমত আলী রব্বান বিএনপির শাসনামল ব্যাতিত অন্য কোন সময়েই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেননি। অন্তত ১০ বার তার জীবন নাশের অপচেষ্টা হয়েছে। আগের মামলা ছাড়াও ২০০৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার নামে ২৭ টি গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার তার বাড়ি ভাংচুর হয়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৭ বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন বার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এভাবে জেল-জুলুম করে তার প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪//

Discussion about this post