মারফত আফ্রিদী, মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৯ বছর পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে’ ২০২৫) সকাল ১০টায় উপজেলা ফুটবল মাঠে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে নাই। ভোটের নামে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা মানুষের সাথে নাটক মঞ্চত্ব করেছেন। বাংলাদেশে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাবরণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, হানিফ ও ইনুর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে যারা আন্দোলনে ছিল তারাই এই এলাকার বিএনপি’র দূর্দিনের সাথী। আমরা সবাই মিলে একটি সুখী সমৃদ্ধ শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন সংস্কার চলতে থাকবে। সংস্কারের দোহায় দিয়ে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কোন সুযোগ নেই।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সাথে এদেশের মাটি ও মানুষের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি সব শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে উঠাবসা করতেন। যার কারনে তার জানাযায় প্রায় ৩০ লাখের অধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেছিল। অথচ শেখ মুজিবের জানাযায় মাত্র ৭-৮ মানুষ উপস্থিত ছিল। এতে প্রমাণিত হয় জিয়াউর ছিলেন বাংলাদেশের গণমানুষের নেতা। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে স্বৈরাচার হাসিনা অনেকবার ধ্বংস করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনাই। স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও তাদের দোষররা নানাভাবে গুজব ও মিথ্যা ছড়িয়ে নতুন করে দেশে অরাজকতা তৈরীর চেষ্টা করছে। এই দোষরদের রুখতে হলে সবাইকে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সূ-সংগঠিত হয়েছে। আগামীতে তার নেতৃত্বে এদেশ পরিচালিত হবে ইনশাল্লাহ।
উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাহবুব আলম হারছেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার বলেন, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। দলের মধ্যে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের সাথে দেশের ছাত্র সমাজ, সচেতন মহল, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বশ্রেণী পেশার মানুষের আন্দোলনের ফসল আজকের নতুন বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে সাঁজাতে হলে সব শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক বাবুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দৌলতপুর-১) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রাগিব রউফ চৌধুরী। এসময় উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও ইউনিয়ন বিএনপি’র হাজারো নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সুলতানপুর মাদরাসায় বেলা আড়াইটায় সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মোট ৯২৩ জন ভোটারের মধ্যে ৮৭০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে খন্দকার টিপু সুলতান ও রহমত আলী রব্বান প্রতিদ্বন্দিতা করেন। পরবর্তীতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ৪৬১ ভোট পেয়ে খন্দকার টিপু সুলতান সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং ৩৯৭ ভোট পেয়ে রহমত আলী রব্বান পরাজিত হয়।
এসময় সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আশরাফুজ্জামান শাহীনকে সভাপতি, খন্দকার ওমর ফারুক কুদ্দুসকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, আবজাল হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এনামুল হক বাবুকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোটে নির্বাচিত খন্দকার টিপু সুলতানকে কে সাধারন সম্পাদক করে আংশিক মিরপুর উপজেলা বিএনপি’র কমিটি ঘোষনা করেন সম্মেলনের অন্যতম বিশেষ অতিথি সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম।

Discussion about this post