মরে যাচ্ছে মাছ, হুমকির মুখে পরিবেশ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিভিন্ন কারখানার দুষিত রাসায়নিক কেমিক্যাল ও ময়লা-আবর্জনা নদীর পানিতে মিশে পানি কাল ও দুষিত হয়ে মরে যাচ্ছে মাছ। এলাকার জীব বৈচিত্রও হুমকির মুখে পড়েছে।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম মাসুম অভিযোগ করে বলেছেন, শিল্প কারখানার দুষিত বজ্য অপরিকল্পিত ভাবে নদীতে ফেলার কারনে লৌহজং নদীতে মাছের ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়। কুটকুটে দুষিত পানির পচা দুর্গন্ধে বসবাস করা কষ্ট হয়ে পরেছে। পানি দুষিত হওয়ার ফলে ইরি বোরো আবাদসহ সবজি, ফলজ বাগান এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পালা মরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এলাকার জীব বৈচিত্রও চরম ভাবে হুমকির মুখে পরেছে। বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি জোর দাবী জানান।
সোমবার (১২ এপ্রিল) লৌহজং নদীর পুষ্টকামুরী, বেগমদুল্যা, পাহাড়পুর, বহুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১০-১২ কি. মি. নদীতে কারখানার দুর্ষিত কেমিক্যাল পানিতে মিশে কাল কুটকুটে হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। পচা পানির কারনে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে।
একই অবস্থা বংশাই নদীর মহেড়া, কোদালিয়া, সোহাগপাড়া, রহিমপুর, সৈয়দপুর, হাটুভাঙ্গা, পলাশতলী ও আজগানা এলাকায়। ভুক্তভোগি পরিবারগুলো অভিযোগ করেন, কারখানার দুষিত বজ্যে পরিবেশ হুমকির মুখে। একই অবস্থা মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার ( পিটিসির) উত্তর পাশে বয়ে চলা খাল-বিলে। পিটিসির ময়লা আবর্জানা খালে ফেলার কারনে পানি কালছে হয়ে পরিবেশ মারাত্বক হুমকির মুখে পরেছে। কৃষকদের চাষাবাদ হুমকির মুখে বলে অভিযোগ করেছে।
রাজাবাড়ি কলেজের প্রভাষক মো. নুরুল ইসলাম সিকদারসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, গোড়াই শিল্পাঞ্চলের অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানার দুষিত বজ্র দীর্ঘ দিন ধরে বংশাই নদী ও এলাকার খাল-বিলে ফেলায় পানি দুষিত হয়ে মাছে ব্যাপক মড়ক দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, এলাকার পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিটি শিল্পকারখানায় ময়লা-আবর্জনা শোধানাগারের জন্য (ইটিপি প্লান্ট) চালু করার সরকারী নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্ত মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ শিল্পকারখানা সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে দুষিত ময়লা-আবর্জনা নদী ও খাল বিলে ফেলছে। ময়লা-আবর্জনার দুষিত বজ্রে এক দিকে এলাকার পরিবেশ যেমন দুষিত হয়ে পরছে সেই সঙ্গে এলাকার জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পরেছে। এছাড়া দুষিত ময়লা-আবর্জনা খাল-বিল ও নদীর পানিতে মিশে মাছের ব্যাপক মড়ক দেখা দিয়েছে। মাছের মধ্যে রয়েছে বোয়াল, শৈল, কাতল, মৃগেল, শিং, টেংরা, মাগুর, তেলাপিয়া, সরপুটি, পাপতা, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। একই অবস্থা মহেড়া ইউনিয়নের পিটিসির আশপাশে। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী মৎস কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্তল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, নদী ও খাল-বিলের পানি দুষিত হওয়ার মুল কারন হচ্ছে শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনা শোধনাগার না করেই অপরিকল্পিত ভাবে ফেলছে। রাসয়নিক পদার্থের মাত্রা বেড়ে গিয়ে পানি দুষনের ফলে নদী ও খাল বিলের মাছ মরে যাচ্ছে। প্রতি বছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্ময়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, রৌহজং নদীর নদীর আশপাশ ও গোড়াই শিল্পাঞ্চলের বংশাই নদীতে দুষিত ময়লা আবর্জনা শোধনাগার না করেই অপরিকল্পিত ভাবে নদীতে ফেলা হচ্ছে। পানি দুষিত হয়ে মাছের যেমন মড়ক দেখা দিয়েছে, সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে এলাকার জীব বৈচিত্রও হুমকির মুখে পরেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনরে সঙ্গে সমন্ময় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেলন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, জলজ প্রানী ও জীব বৈচিত্র ধ্বংস করার জন্য যারা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি দুষিত করছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালমা সৈয় পলি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নদী, খাল বিলে ময়লা আবর্জনা ফেলে পানি দুষিত করার কোন সুযোগ নেই। শিল্প কারখানা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা আবর্জনা যাতে যত্রতত্র না ফেলে নদীর পানি দুষিত এবং পরিবেশ দুষিত না করা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্ময় ও তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//২২ এপ্রিল,২০২২//

Discussion about this post