টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অপরাধ মুুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেছে বাইকার গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং গ্রæপের শতাধিক সক্রীয় সদস্য। বাইক চালিয়ে অপরাধ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রæপের এই সন্ত্রাসীরা। এই গ্রæপের সদস্যরা বাইকার গ্রæপ নামে পরিচিত। বাইক নিয়ে অপরাধ করে সহজেই সটকে পরেছে এই গ্রæপের সদস্যরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এদের কাছে অসহায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উঠতি বয়সের কিশোররা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সড়ক মহাসড়ে দল বেঁধে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত, চুরি, ডাকাতি ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদক ব্যবসা এবং অপহরনসহ সমাজের নানা অপরাধের সঙ্গে এই গ্রæপের সদস্যরা জড়িত। স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক। সর্বশেষ গতকাল (৯ মে) কিশোর গ্যাং গ্রæপের হামলায় অন্তত ১২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছে। কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যের ভয়ে নিরীহ ছাত্ররা পুলিশ পাহাড়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
আজ বুধবার (১০ মে) ভুমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি এ বিষয়ে বলেন, মির্জাপুরকে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে গড়ো তোলার জন্য তিনি কাজ করছেন। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং মাদক নির্মুলসহ কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি ঘোষনা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামীলীগ অফিসে কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যদের নিয়ন্ত্রন এবং বাইকার গ্রæপের সদস্যদের ধরতে রাতে জরুরী সভা হয়।
গত কয়েক দিন ধরে মির্জাপুর পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে এবং কিশোর গ্যাং গ্রæপের হাতে যারা ভুক্তভোগি তারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মির্জাপুর পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের শতাধিক স্পটে কিশোর গ্যাং গ্রæপে ভাগ হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। একটি বাইকে ৩-৪ জন উঠে রাস্তা দখল করে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। এই ফাঁকে নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ছিনতাই, ডাকাতি করে সটকে পরে। গুরুত্বপুর্ন রাস্তার মোড়, স্কুল-কলেজের সম্মুখ, হাইওয়ে রোড, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং বাসাবাড়ির সামনে এদের আড্ডা চলে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ জন এই প্রতিনিধির কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার মির্জাপুর এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশ, থানা রোড, বাওয়ার রোড, শহীদ মিনার রোড, পুরাতন বাস স্টেশন, মির্জাপুর বাইপাস, বাইমহাটি প্রফেসরপাড়া, কালিবাড়ি রোড, পোষ্টকামুরী জহুরবাড়ি মোড, ডাক বাংলো, সওদাগড়পাড়া, মির্জাপুর ট্রেন স্টেশন, গোড়াইল, বাওয়ার কুমারজানি, কুতুব বাজার, মির্জাপুর বাবু বাজার, সরিষাদাইর, ঢাকা-টাঙ্গাইল মাসড়কের ১০-১২ টি স্পট কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যদের আস্তানা রয়েছে।
এদিকে পৌরসভার বাহিরে গোড়াই, নাজিরপাড়া, সৈয়দপুর, হাটুভাঙ্গা, ক্যাডেট কলেজ এলাকা,আজগানা, বাঁশতৈল, তরফপুর, রতিফপুর, ফতেপুর, বাঁশতৈল, ছাওয়ালী, বানিয়ারা, ডোকলাহাটি, জামুর্কি, জামুর্কি, ধল্যা, বানাইল, আনাইতারা, ওয়াশি, নাগরপাড়া, রুয়াইল, ভাওড়া, কামারপাড়া বাজার, ভাতগ্রাম ও বহুরিয়া ইউনিয়নের শতাধিক স্পটে কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যরা অপরাধ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, জুয়া ও মাদক ব্যব্সা জমমজাট বলে ভুক্তােগিরা অভিযোগ করেন। এদের অত্যাচারে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলারদিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন।
শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুইজন প্রধান শিক্ষক এবং তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যদের হাতে এলাকাবাসি জিম্মি হয়ে পরেছে। তাদরে বেরোয়া চলাফেরায় স্কুল কলেজের ছাত্রীরা চলারোরা করতে পারছে না। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরন ও মাদক ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনকে এদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এই গ্রæপের সদস্যদের হাতে কুরনী জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবীতে অভিভাবক ও এলাকাবাসি ঢাকা-টাঙ্গাইর মহাসড়ক অবরোধ করে ্রপতিবাদ সমাবেশ করেছে।এর আগে সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা এবং কিশোর গ্যাংগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বেশ কয়েকটি অপরাধ ঘটিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় মামলা হলেও আইন-শৃঙ্খলা তাদের হাদের গ্রেফতার করছে না বলে অভিােযগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রায়ই কিশোর গ্যাং গ্রæপের মধ্যে অস্্েরর মহড়া ও হামলার ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেছেন, এমপি মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় কিশোর গ্যাংসহ মাদক ও বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তালিকা তৈরী গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অপরাদের সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাবে কোন অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তােিদর বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ও এসরি্যান্ড মো. আমিনুর ইসলাম বুলবুল বলেন, এমপি মহোদয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক দলের নের্তৃবন্দ এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্ময় করে আইন-শৃঙ্খলা ভাল রাখার জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমপি মহোদয় ইতি মধ্যে এ বিষয়ে কাজ করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১০ মে ২০২৩