মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাইকার গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এই গ্রুপের সদস্যদের হাতে আবার হামলার শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম (১৭)। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত আশরাফুলের পিতা শওকত সিকদার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার পর পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেফতার এবং বাইকার গ্রুপের অর্ধশাতিক মোটর সাইকেল জব্দ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) মির্জাপুর থানার উপ পরিদর্শক ও সেকেন্ড অফিসার মো. মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপর দিকে এই গ্রুপের কারনে মির্জাপুরে হঠাৎ করেই আইন-শৃঙ্খলার বেশ অবনতি হয়েছে। বেড়েছে মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নানা কৌশলে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ড। ফলে অভিভাবকগন ও সচেতন মহল খুবই উদ্বিগ্ন। তবে আইন-শৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন অপরাধ ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বাইকার গ্রুপ ও কিমোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা বেরোয়া হয়ে উঠিছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পরছে এদের বিস্তার। বাইক চালিয়ে অপরাধ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের এই সন্ত্রাসীরা। এই গ্রুপের সদস্যরা বাইকার গ্রুপ নামে পরিচিত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এদের কাছে অসহায়। উঠতি বয়সের কিশোররা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সড়ক মহাসড়ে দল বেঁধে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত, চুরি, ডাকাতি ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদক ব্যবসা এবং অপহরনসহ সমাজের নানা অপরাধের সঙ্গে এই গ্রুপের সদস্যরা জড়িত। এর আগে গত ৯ মে কিশোর গ্যাং গ্রুপের হামলায় অন্তত ১২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যের ভয়ে নিরীহ ছাত্ররা পুলিশ পাহাড়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপের হাতে যারা ভুক্তভোগি তারা অভিযোগ করেন, মির্জাপুর পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ভাগ হয়ে অপরাধ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। এই ফাঁকে নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ছিনতাই, ডাকাতি করে সটকে পরে। গুরুত্বপুর্ন রাস্তার মোড়, স্কুল-কলেজের সম্মুখ, হাইওয়ে রোড, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং বাসাবাড়ির সামনে এদের আড্ডা চলে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্তত ১২ জন এই প্রতিনিধির কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার মির্জাপুর এস কে পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশ, থানা রোড, বাওয়ার রোড, শহীদ মিনার রোড, পুরাতন বাস স্টেশন, মির্জাপুর বাইপাস, বাইমহাটি প্রফেসরপাড়া, কালিবাড়ি রোড, পোষ্টকামুরী জহুরবাড়ি মোড, ডাক বাংলো, সওদাগড়পাড়া, মির্জাপুর ট্রেন স্টেশন, গোড়াইল, বাওয়ার কুমারজানি, কুতুব বাজার, মির্জাপুর বাবু বাজার, সরিষাদাইর, ঢাকা-টাঙ্গাইল মাসড়কসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক স্পট কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের আস্তানা রয়েছে।
এদিকে পৌরসভার বাহিরে গোড়াই, নাজিরপাড়া, সৈয়দপুর, হাটুভাঙ্গা, ক্যাডেট কলেজ এলাকা,আজগানা, বাঁশতৈল, তরফপুর, লতিফপুর, ফতেপুর, বাঁশতৈল, ছাওয়ালী, বানিয়ারা, ডোকলাহাটি, জামুর্কি, জামুর্কি, ধল্যা, বানাইল, আনাইতারা, ওয়াশি, নাগরপাড়া, রুয়াইল, ভাওড়া, কামারপাড়া বাজার, ভাতগ্রাম ও বহুরিয়া ইউনিয়নের শতাধিক স্পটে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা অপরাধ করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, জুয়া ও মাদক ব্যব্সা জমমজাট বলে ভুক্তােগিরা অভিযোগ করেন। এদের অত্যাচারে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলারদিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন।
কুরনী ও ইচাইল গ্রামের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই গ্রুপের সদস্যদের হাতে কুরনী জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবীতে অভিভাবক ও এলাকাবাসি ঢাকা-টাঙ্গাইর মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেছেন, এমপি মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় কিশোর গ্যাং ও বাইকার গ্রুপের সদস্যদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। মীর দেওয়া হাটা গ্রামের জাহিদুর ইসলাম বাবু, মেহেদী হাসান ও রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক ও বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তালিকা তৈরী গ্রেফতারে সাঁড় লাদেন, আব্দুল্লাহ, রিদয়, সিয়াম ও নির্জনসহ ৭-৮ জন পলাতক। তাদরে ধরতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন। অপরাদের সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাবে কোন অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ও এসরি্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এমপি মহোদয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক দলের নের্তৃবন্দ এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্ময় করে আইন-শৃঙ্খলা ভাল রাখার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, অপরাধীদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধীরা অপরাধ করে যাতে পার পেয়ে না যায়, সে জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতায় তাদের প্রতিহত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Discussion about this post