মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে তীব্র গ্যাসের সংকট থাকায় মিলকারখানায় প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কবে নাগাদ গ্যাস সংকট সমাধান হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।ফলে আসছে ঈদে বিপুল অংকের ক্ষতির আশংকায় হতাশায় ভুগছে মালিকরা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোং লি. এর কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তীব্র গ্যাস সংকট থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে বিদেশী বায়ারদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকগন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোং লি. এর কর্মকর্তাগন বলেছেন, কমপ্রেসারের মূল পাইপে গ্যাসের চাপ না থাকায় ও বিভিন্ন স্থানে রক্ষনাবেক্ষনের কাজ হওয়ায় গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। কবে নাগাদ সমাধান হবে তাও অনিশ্চিত। তবে মূল পাইপে গ্যাস সচল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আজ সোমবার (১১ এপ্রিল) গোড়াই শিল্পাঞ্চলের একাধিক শিল্প মালিক ও শ্রমিক সুত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই শিল্পাঞ্চলে ছোট বড় মিলে শতাধিক মিলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় উৎপাদন মুলত গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নাহিদ কটন মিলস লি. ডেলসি কটন স্পিনিং মিলস লি. উত্তরা স্পিনিং মিলস লি. টেকনো স্পিনিং মিলস লি. নিউটেক্্র নীট কম্পোজিট লি. সাউথ ইস্ট টেক্সটাইলস স্পিনিং মিলস লি. সাউথ ইস্ট গার্মেন্টস লি. কম্পিট কম্পোজিট নীট লি. কম্পিট কম্পোজিট স্পিনিং মিলস, কম্পিট কম্পোজিট গার্মেন্টস, ইয়ুৎ স্পিনিং মিলস লি. বেঙ্গল এনএফকে লি, খান গার্মেন্টস লি. মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাসটিজ লি. মন্ডল গ্রুপ অব লি. নাসির গ্রুপ অব ইন্ডসটিজ লি. শিরীন স্পিনিং মিলস, নিউটোন গ্রুপ অব লি. বাডর্স গ্রুপ অব লি. ও টাঙ্গাইল কটন মিলস উল্লেখ্যযোগ্য। এসব শিল্পকারখানায় প্রায় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক চাকুরি করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন শুন্যের কোঠায় নেমে মিল বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের চাকুরি হারাতে হচ্ছে। এছাড়া মালিক পক্ষও শতশত কোটি টাকার লোকসানে বলে কারখানার মালিক-কর্মকর্তা এবং শ্রমিকগন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নাহিদ কটন মিলস লি. এবং ডেলসি কটন স্পিনিং মিলস লি. এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. শহিদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোড়াই শিল্প এলাকায় ৫০ পিএসআইজি লাইনে গ্যাসের চাপ পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানো হলেও গ্যাসের সেবার মান একটুকুও বাড়েনি। গ্যাসের সংকট থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে প্রতি মাসে তাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। উদৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট থাকায় এই কারখানায় কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও তারা বিষয়টির দিকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে কারখানার মালিকপক্ষ শতশত কোটি টাকার ব্যাংক ঋনে জর্জরিত হয়ে পরেছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার কারখানাসহ গোড়াই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত প্রায় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক কর্মচারীর চাকুরি হারিয়ে বেকার হতে যাচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন, উত্তরা স্পিনিং মিলস, টেকনো স্পিনিং মিলস, কম্পিট কম্পোজিট, সাইথ ইস্ট টেক্সটাইল ও নিউটেক্স গ্রুপ অব ইন্ডাসটিজের কর্মকর্তা এবং পরিচালকগন। শিল্পাঞ্চল টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শিল্প মালিকদের সংগঠন গোড়াই-কালিয়াকৈর-কোনাবাড়ি ইন্ডাসটিয়াল ফোরামের সভাপতি মি. বিধান কুমার রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি এলাকায় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গত ১-২ মাস ধরে গ্যাসের চাপ নেই। দিন রাত মিলে ২-৩ ঘন্টাও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন না হওয়ায় তাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে মালামাল দিতে না পারায় বিদেশী বায়ারদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারখানায় কর্মরত প্রায় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর চাকুরী চলে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিষয়টির দিকে সরকারের উচ্চ পর্যায় এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিউিশন কো. লি. টাঙ্গাইল জোনাল অফিসের ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোড়াই এলাকার শিল্পের মালিকদের পক্ষ থেকে গ্যাস না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কমপ্রেসারের মুল লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় শিল্পে নয় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হ্যাসের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে গ্যাস সচল রাখার চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে গ্যাস সংকট থাকবে না।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post