Print Date & Time : 26 May 2025 Monday 1:15 am

মির্জাপুরে চলছে অবৈধ মাটি চুরির মহোৎসব

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পাহাড়, নদী ও তিন ফসলি জমি থেকে চলছে মাটি এবং বালি চুরির চুরির মহোৎসব।

প্রশাসনের কঠোর নজরদারী এবং জেল জরিমানার পরও পাহাড়, নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধ ভাবে মাটি চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

দিনে রাতে ১৫-২০ টনের মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় এলাকার রাস্তাঘাটের যেমন ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও হুমকির মুখে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট করে পাহাড়ি লাল মাটির টিলা, নদী ও নদীর চর এবং ফসলি জমির মাটি প্রকাশ্যে ও রাতের আধারে ভ্যেকু ও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ ভাবে কেটে নেওয়ায় এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধ মাটি ও বালি চুরি বন্ধে বন্ধে ইউএনও-এসিল্যান্ড এবং ওসি প্রতিনিয়তই মোবাইল পরিচালনা করে মাটি চোরদের জেল জমিনা করছেন।

প্রশাসেনর ঝটিকা অভিযানে আজ শুিক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১০-১২ টি মাটি কাটার যন্ত্র ভ্যেকু, ৩০-৩৫টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা জরি মানা করেছেন। সেই সঙ্গে মাটি চোরদের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের এত নজরদারীর পরও অবৈধ মাটি চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত বুধবার অভৈধ ভাবে মাটি কাটায় ১২ জন মাটি চোরকে আটক করে সারে আট লাখ জরিমানা করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মির্জাপুর উপজেলার কয়েকটি এরাকায় খোঁজ নিয়ে এবং ভুক্তভোগিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

উপজেলার আজগানা ইউনয়ের মো. কুতরত আলী (৬৫), টাকিয়া কদমা গ্রামের ফারুক হোসেন (৪৫), নরদানা গ্রামের সাইজুদ্দিন (৫৫) সহ ১৫-২০ জন ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, গত এক মাস ধরে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই, আজগানা, লতিফপুর, তরফপুর ও বাঁশতৈল এই পাঁচ ইউনিয়নে পাহাড়ি টিলার লাল মাটি অবৈধ ভাবে চুরি করে কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রকাশ্যে ও রাতের আধারে চলছে এ মাটি কাটার মহোৎসব। ফলে পাহাড়ি এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি এলাকার রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। একই ভাবে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া ও বহুরিয়া ইউনিয়নের তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে চক্রটি। পাশাপাশি বংশাই ও লৌহজং নদীতে ড্রেজার বাসিয়ে চরের বালি কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ফসিল জমির উপর ভ্যেকু ও নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে মাটি ও বালি চুরি। মাটি ও বালি ১৫-২০ টনের ড্রাম ট্রাক রাস্তার উপর দিয়ে নেওয়ার ফলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রাম ট্রাক চলায় ধূলোবালিতে আশপামেল ঘরবাড়িতে বসবাস অনুপযোগি হয়ে উঠেছে। এক দিকে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে তেমনি সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফসলি জমির উপর দিয়ে জোর পুর্বক রাস্তা নির্মান করে দিনে রাতে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করছে। কোন কৃষক বাঁধা দিলে তাদের নানা ভাবে মামলা ও পুলিশের গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি চোরদের দাপটে ড্রাম ট্রাক চলায় দেওহাটা-বহুরিয়া রোড, দেওহাটা-যুগিরকোপা রোড, কাশে ড্রাইসেল-কোদালিয়া রোড, গোড়াই-সখীপুর রোড, হাটুভাঙ্গা-আজগানা-কুড়িপাড়া রোড, পেকুয়া-পাথরঘাটা রোড, বাঁশতৈল-বালিয়াজান রোড, মির্জাপুর-ভাওড়া রোড, মির্জাপুর-ওয়ার্শি-বালিয়া রোড, ভাতগ্রাম-লাউহাটি রোড, কুরনী-ফতেপুর-বাসাইল রোড, কদিমধর‌্যা-ছাওয়ালী-মহেড়া রোড, পাকুল্যা-দেলদুয়ার রোড, পাকুল্যা-লাউহাটি রোডসহ অন্তত ৩০-৩৫ টি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে।
ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে ১৫-২০ টি ছোট বড় ব্রিজ কালভার্ট। এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই এখন দুষ্কর বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেন।

এদিকে এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে মাটি চুরি বন্ধে অভিযানে নামেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন, এসিল্যান্ড মাসুদুরর হমান ও মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, ৩০-৩৫ ট্রাম ট্রাক, ১০-১২ টি ভ্যেকু, ২ টি ড্রেজার, একটি নবেট, এক হাজার মিটার ড্রেজারের পাইপ জব্দ করেছেন। মামলা দিয়েছেন অর্ধশত এবং কয়েক জনকে কারা দন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ড্রাম ট্রাক দিয়ে অবৈধ ভাবে মাটি লোড আনলোড করায় এলাকার রাস্তাঘাটের ও ব্রিজ কালবার্টের ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসন থেকে এগুলো বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোট পরিচালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাকিলা বিনতে মতিন এবং এসিল্যান্ড এক্্িরকিউটিব ম্যাজিষ্ট্রেট মাসুদুর রহমান বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় একটি চক্র প্রভাব বিস্তার করে পাহাড়ের লাল মাটির টিলা, নদী ও নদীর চর এবং ফসলির জমির মাটি ভ্যেকু ও ড্রেজার বসিয়ে প্রকাশ্যে ও রাতের আধারে কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাটি চোর চক্রের সদস্যরা যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন কোন অবস্থায় তাদের ছাড় দেওয়া হবেনা। মোবাইল কোট পরিচালনা করে জরিমনা, জেলসহ মাটি কাটার যন্ত্রপাতি ও ট্রাক জব্দ করা হচ্ছে। অভিযান আরও কঠোর ভাবে পরিচালনা করা হবে। সর্বশেষ গত বুধবার অবৈধ ভাবে মাটি কাটায় ১২ জন মাটি চোরকে আটক করে সারে আট লাখ জরিমানা করা হয়েছে বরে তারা উল্লেখ করেন।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//