আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার গ্রামীন অবকাঠামো রাস্তাঘাট উন্নয়নের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আটজন মেম্বার স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম আব্দুল কাদের সিকদার এবং তিনি ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি। ঘটনার পর এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার ও ইউনিয়ন আওায়ামীলীগের সহসভাপতি ২০২২ সালে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার রুপ পাল্টে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হন। ইউপি মেম্বারদের মধ্যে আবুল হোসেন, লুবনা আক্তার, আক্তার হোসেন, নুরুল ইসলাম, সুমাইয়া আক্তার ও নুরুল হকসহ অনেকেই অভিযোগ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি নিজের ইচ্ছেমত কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।
তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হুমকিসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভিতি দেখান। ওয়ার্ড মেম্বারদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার ক্ষমতার দাপট ও প্রভাব বিস্তার করে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ (টি আর), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা), বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচী (এডিপি), এলজিএসপি ও উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবসহ একটি সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে যোগসাজস করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্বসাত করেছেন।
এছাড়া জন্ম নিবন্ধন, মাতৃত্বকালিন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, জমি দখল করে দেওয়া, প্রহসন মুলক বিচারের নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আসা অসহায় লোকজনকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই চেয়ারম্যান। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চিতেশ্বরী-মাটিয়াখোলা রাস্তা, চিতেশ্বরী- ফকিরবাড়ি রাস্তা, হাটুভাঙ্গা জিসি- কুড়িপাড়া-জিসি রাস্তা, মজিদপুর- ঈদগা রাস্তা, ঘাগড়াই কুমড়াতলী- মনিরের বাড়ি রাস্তা, তেলিনা নালীলপাড়- তেমাথা রাস্তা এবং কুড়িপাড়া মধুরটেকি- আরফানের বাড়ির রাস্তাসহ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অন্তত ১৬ লাখ টাকা আত্নসাত করেছে ইউপি চেয়ারম্যান।
এদিকে গতকাল সোমবার (১৭ জুলাই) ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল ইসলাম সরকার, সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার লুবনা আক্তার, ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল হক, সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার সুমাইয়া বেগম, ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার হাজী ছানোয়ার হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার আকতার হোসেন এবং ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল কাদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরর বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংসদ খান আহমেদ শুভ এমপি, টাঙ্গাইলেল জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আজগানা ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স নিতে আসা অন্তত পাঁচজন ভুক্তভোগি নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, একটি ট্রেড লাইসেন্স নিতে চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা দাবী করেন। সরকারী নির্ধারিত ফি তিনি মানেন না। দিনের পর দিন তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। একই অভিযোগ করেন মাতৃত্বকালিন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য অসহায় নারী পুরুষ।
এ ব্যাপারে ১১ নং আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের সিকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। যারা অভিযোগ দিয়েছেন সেই মেম্বারগন বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আমার কাছে চাঁদা দাবী করেন।
এছাড়া এলাকায় বিচার শালিসসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমার কাছে কোন সুবিধা না পেয়ে তারা আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরী মিটিংএ উপস্থিত থাকায় তার পক্ষে এনডিসি মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগও এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুলাই ১৯,২০২৩//

Discussion about this post