Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 11:27 pm

মির্জাপুরে ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাঃ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া ও উপজেলা সদরের ট্রেন স্টেশন এখন মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।

একই ভাবে শহর ও গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পরেছে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। প্রকাশ্যেই চলছে ছিনতাই ও চুরি। দুটি স্টেশনেই মাদক ব্যবসা এখন জমজমা। পাড়া মহল্লা ও অলি-গলিতে মাদক কারবারীরা বেপরোয়া বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড মাদকের রাজধানী হিসেবে ক্যাত। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ।
পুলিশ জানিয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণে তারা সর্বাত্বক কাজ করে যাচ্ছেন।
ভূমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খান আহমেদ শুভ এমপি জানিয়েছেন, এলাকা থেকে মাদক নির্মুলে তিনি কাজ করছেন এবং কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। মাদককের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার ( ১৯ জানুয়ারি) এলাকার ভুক্তভোগি পরিবার ও সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলে মাদকের এমন ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে বাস ও ট্রেনে উত্তরাঞ্চল থেকে মাদকের চালান আসছে মির্জাপুরের মহেড়া ও উপজেলা সদরের ট্রেন স্টেশনে।
মাদক কারবারীরা বিভিন্ন ভাগে মাদকের চালান মির্জাপুর পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এ মাদক ব্যবসা। দুটি ট্রেন স্টেশনেই প্রকাশ্যে চলছে ছিনতাই ও চুরি। নিরাপত্তাহীনতাই ট্রেনে আসা যাত্রীরা বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদক কারবারীদের হাতে হয়রানীর শিকার অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষ অভিযোগ করেন, মহেড়া ও মির্জাপুর সদরের ট্রেন স্টেশনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই বলে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ হচ্ছে। যাত্রীরা স্টেশনে নামলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন।

তারা অভিযোগ করেছেন, মির্জাপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মাদক কারবারী। তাদের সহযোগিতা করে থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অপরাধী সিন্ডিকেট চক্র।
মির্জাপুর সাহাপাড়া, কুমুদিনী হাসপাতাল সংলগ্ন লৌহজং নদীর ঘাট, বাইমহাটি, ঘোষপাড়া, আন্ধরা, পাহাড়পুর, বাবু বাজার, মুসলিমপাড়া, পাহাড়পুর, সারিষাদাইর, শ্রীহরিপাড়া, রাজনগর, কুতুববাজার, কান্ঠালিয়া, বাওয়ার কুমারজানি, বংশাই সেলুঘাট, গাড়াইল, ত্রিমোহন, সওদাগড়পাড়া, কাঁচাবাজার, প্রফেসরপাড়া, বাইমহাটি এবং পুষ্টকামুরী গ্রাম এখন মাদকের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ। এসব এলাকার বাজারের অধিকাংশ চা স্টলে পর্দার অন্তরালে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদক কারবারী ও জুয়াড়িদের কারনে তারা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। প্রকাশ্যেই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হয়। মাদক সেবীরা মাদক সেবন করে রাস্তা ঘাটে মাতলামি করে পথচারীদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজও করছে।
মির্জাপুর উপজেলার ১৪ জন ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে জামুর্কি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ও আজগানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় অভিযোগ করেন, উপজেলার মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নের বেশ কিছু পয়েন্টে পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক ব্যবসাসহ জুয়া আসরসহ নানা অপরাধ। মির্জাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী আনাইতারা ইউনিয়ন, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও ধামরাই উপজেলার সীমান্তবর্তী গোড়াই, ভাওড়া, ওয়ার্শি ও বহুরিয়া ইউনিয়ন এবং মির্জাপুর, বাসাইল, সখীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী মহেড়া, ফতেপুর,ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন মাদকের ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন।

মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, মির্জাপুরকে মাদক মুক্ত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। মাদক ও জুয়াড়ীরা যত শক্তিশালীই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে কয়েক শতাধিক মাদক কারবারী, জুয়াড়ি ও অপরাধীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান অব্যহৃত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উপজেল নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাদক ব্যবসী ও জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা এবং কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। তাদের এ মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//