টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ছয় ইউনিয়নের নির্বাচনে দলীয় মনোয়ন পেতে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রার্থীর নিকট থেকে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
তৃণ মুল থেকে বাছাইকৃত দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন না করে কয়েকজন বিতর্কিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে ১০ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন যাচাই না করেই দুর্নীতিবাজদের পাঠানো প্রার্থীদের দলীয় মেনানয়ন দিলে ৬ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের ভড়াডুবির শংকা রয়েছে।
মনোনয়ন বানিজ্যের কারনে গত ১৫ জানুয়ারী ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মির্জাপুরে ৮ ইউনিয়নের মধ্যে চার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার ভড়াডুবি হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘরে বাইরে চলছে চরম দ্বদ্ধ। তৃণমুলের নেতাকর্মীরা যাচাই বাছাই করে যোগ্যদের মনোয়নপত্র (নৌকার টিকেট) দেওয়ার জন্য মনোয়ন বোর্ড এবং প্রধান মন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছেন,।
মঙ্গলবার (১০ মে) উপজেলা আওয়ামী লীগ সুত্র জানায়, আগামী ১৫ জুন উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম জহির জাহির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ছয় ইউনিয়নেই চলছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ ও উত্তাপ। ভোটারদের মন জয় করতে দিয়ে যাচ্ছেন নানা উন্নয়ন মুলক কাজের প্রতিশ্রুতি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৌশল বিনিময়, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করে যাচ্ছেন। তবে ভোটারগনও এবার শক্ত অবস্থান নিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। তারা যোগ্য ও সমাজের গ্রহনযোগ্য প্রার্থীকেই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন।
আওয়ামীলীগের দলীয় সুত্র জানায়, ছয় ইউনিয়ন হচ্ছে মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, আজগানা ও তরফপুর। চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিন নং ফতেপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন তালুকদার, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, চার নং ভাওড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মো. জুয়েল ইসলাম ও আব্দুল মালেক, লতিফপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন ও আলী হোসেন, বহুরিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু সাইদ তালুকদার ছাদু, মো. আবুর কাশেম খোকন ও শেখ জসিম উদ্দিন, ১১ নং আজগানা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওায়ামী লীগের সাবেক পরিবশে ও বন বিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম সিকদার রফিক, মো. শহিদুল ইসলাম সহিদ মল্লিক, আব্দুল কাদের সিকদার ও আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া, ১২ নং তরফপুর ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. ইজ্জত আলী জনি, মো. নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং শরিফুল ইসলাম শরিফ প্রমুখ।
এদিকে ফতেপুর, ভাওড়া, লতিফপুর, বহুরিয়া, আজগানা ও তরফপুর এই ৬ ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, দলের মধ্যে একটি প্রভাবশালী চক্র মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইউনিয়নের তৃনমুল থেকে যোগ্য ও গ্রহন যোগ্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম নয়ছয় (কাটছাট করে) বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদরে অনেকের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী, মাটি চুরি, প্রহসন মুলক বিচারের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, একাধিক মামলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
যোগ্যদের নাম আগে না দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নৌকার টিকেট দিতে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। ৬ ইউনিয়ন থেকে প্রায় তিন থেকে চার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। বিতর্কিতদের মনোয়ন না দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত ও সাবেক ভিপি সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, ছয় ইউনিয়নে মধ্যে ২৫ জন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। তৃণমুল থেকে আসা যোগ্য, গ্রহনযোগ্য এবং ত্যাগী নেতাদের চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অদৃশ্য শক্তির বলে ঐ তালিকা নয়ছয় হয়েছে বলে তারাও জানতে পেরেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকমৃীদের মধ্যে আলাচনা সমালোচনা হচ্ছে। যোগ্য ও গ্রহনযোগ্যদের নৌকার মনোয়ন দেওয়া না হলে চেয়ারম্যান বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পরবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যোগ্য ও ত্যাগীদের মনোয়ন দেওয়ার জন্য দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং মনোয়ন বোর্ড এর সদস্যদের নিকট তিনি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শরিফা বেগম বলেন, আগামী ১৫ জুন মির্জাপুর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৭ মে মনোয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন, বাছাই হবে ১৯ মে, আপিল ২২ মে, আপিল নিষ্পত্তি ২৫ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ মে, প্রতিক বরাদ্ধ ২৭ মে এবং ভোট গ্রহন হবে ১৫ জুন। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপুর্ন ভাবে গ্রহনের লক্ষে নির্বাচন কমিশনের দিক নির্দেশনায় তাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ১১,২০২২//

Discussion about this post