মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তীব্র শীতে বাড়ছে শিশু ও বয়ষ্কদের মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং ঠান্ডাজনিতসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পরেছে।
আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) হাসপাতালসহ বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় গত ১৫-২০ দিন ধরে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। কোথাও রোধ ও সুর্যের দেখা নেই। বিশেষ করে গভাদী পশু নিয়ে চরম বিপাকে পরেচেন কৃষকরা। পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শীত জনিত রোগ ছড়িয়ে পরেছে। সরকারী হাসপাতালেল পাশাপাশি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। শীত ও ঘন কুয়াশার সঙ্গে পাল্ল দিয়ে বাড়ছে শীত জনিত ঠান্ডা নানা রোগ। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে শিশুদের জ্বর, শ্বাস তন্ত্র, নিউমোনিয়া, ব্রক্্রকিউলাইটিস, ডায়রিয়া এবং বয়স্ক নারী পুরুষদের মধ্যে এজমা রোগ ছড়িয়ে পরেছে।
মির্জাপুর উপজেলা সদরের কুমুদিনী হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীদের উপচেপরা ভিড়। বহিঃ বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে কয়েক শতাধিক অভিভাবক ঠান্ডা জনিত রোগে অসুস্থ্য শিশুদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন। কুমুদিনী হাসপাতালে শিশু বিভাগে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শিশু কন্যা নাইমার মা কুলছুম বেগম বলেন, মেয়েকে নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন। জ্বর ঠান্ডা ও ডায়রিয়া ছিল। সঙ্গে প্রচন্ড সর্দি ও কাশি। কুলছুম বেগমের মতে অনেক শিশুর পরিবারই এমন চিত্র তুলে ধরেন।
কুমুদিনী হাসপাতালের হাসপাতালর চাইল্ড রিচার্স ফাউন্ডেশনের বহিঃবিভাগের চিকিৎসক কলি জানান, বহিঃবিভাগে প্রতি দিন ২০০-২৫০ জন শিশু ঠান্ডা জনিত রোগে চিকিৎসা নিতে আসছে। এদের মধ্যে বেশী অসুস্থ্য শিশু ভতি হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অভিভাবকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কুমুদিনী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অসুস্থ্য শিশুদের চিকিৎসক এবং নার্সগন চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত।
কুমুদিনী হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক আরও বলেন, তীব্র শীতের কারনে ঠান্ডায় শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ বেশী দেখা দিয়েছে। কুমুদিনী হাসপাতালে শিশু বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০-৬০ জন শিশু ও বয়স্ক নারী পুরুষ ভর্তি হয়েছেন। কুমুদিনী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এখানকার চিকিৎসক ও নার্সগন দিন রাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অসুস্থ্য শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে। শিশুদের অভিভাবকদের রোগ প্রতিরোধের জন্য ভাল পোষাক পরিচ্ছেদ, গরম জামা কাপড়, ঠান্ডা জনিত এলাকা এড়িয়ে চলা, গরম তরল খাবার ও পুষ্টি জনিত খাবারসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে।
এ ব্যাপারে কুমুদিনী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (পেডিয়াটিকস) এমপিএইচ (নিপসম) ডা. এ বি এম আলী হাসান বলেন, কিছু দিন ধরে প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে শিশুসহ বয়স্কদের মধ্যে ঠান্ডা জনিত রোগ ছড়িয়ে পরেছে। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর, শ্বাস তন্ত্র, নিউমোনিয়া, ব্রক্্রকিউলাইটিস, ডায়রিয়া ও বড়দের এজমাসহ নানা রোগ। যারা চিকিৎসার জন্য আসছেন হাসপাতালের চিকিৎসকগন রোগীদের যতœ সহকারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র, বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে এবং মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সহকারী ও স্বাস্থ্য সেবিকাগন শীত ও ঘন কুয়ায় ঠান্ডা জনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা মুলক পরামর্শ ও কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন ও এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া শীতের কম্বল অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রসা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানার নির্দেশনায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে মির্জাপুর উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//