মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই-লৌহজং নদীর তীব্র ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে চরম দুর্ভোগে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
হুমকির মুখে রয়েছে বান্দরমারা-পাথরঘাটা ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। বংশাই-লৌহজং নদীর আশপাশে ভাঙ্গনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে ভুক্তভোগি পরিবারগুলো অভিযোগ করেছেন।
ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা, হাট বাজার, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় অসহায় পরিবারগুলো পরেচেন চরম বিপাকে।
আজ বুধবার (১০ জুলাই) ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেন, বংশাই নদীর মির্জাপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড গাড়াইল ও পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, ৫ নং ওয়ার্ডের কুমারজানি ও বাওয়ার কুমারজানি, দুই নং ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী পশ্চিমপাড়া হুমকির মুখে পরেছে। এই তিন ওয়ার্ডের কয়েক দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বংশাই নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বান্দরমারা-পাথরঘটা ৮ কি. মি. বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে বলে তারা অভিযোগ করেছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে তালিয়ে যেতে পারে কয়েকটি এলাকা। একই অবস্থা দেখা দিয়েছে ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, থলপাড়া, হিলড়া আদাবাড়ি, পারদিঘী, চাকলেশ্বর, বৈলানপুর, গোড়াইল, গাড়াইলসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, হাট জাহার ও রাস্তাঘাট ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। নদী ভাঙ্গনে ফতেপুর বাজার সংলগ্ন পাকা রাস্তা বিলিন হয়ে মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে বাসাইল উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন হয়ে গেছে। তীব্র নদী ভাঙ্গনে হাট ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ. হাট ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, মির্জাপুর-বাসাইল রাস্তা, ফতেপুর-মহেড়া-মির্জাপুর রাস্তাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট ফতেপুর হাট ও বাজার এখন হুমকির মুখে। এছাড়া ফতেপুর পালপাড়া এলাকার শতাদিক পরিবার নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এই ইউনিয়নের ১০-১২ টি গ্রাম এখন মির্জাপুরের মানচিত্র থেকে একবারেই হারিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।
হিলড়া আদাবাড়ি মোকছেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহীম মিয়া ও ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা ও ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মানসহ ফতেপুর ইউনিয়নকে রক্ষার জন্য শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি ইতিপুর্বে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসুচী পালন করেছে। তারপরও স্থায়ী বাঁধ নির্মান হয়নি। বংশাই নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি, ত্রিমোহন, বান্দরমারা, যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ^রসহ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়েছে।
অপর দিকে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে লৌহজং নদীতে। ভুক্তভোগি একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, লৌহজং নদীর মাঝালিয়া, গুনটিয়া, চুকুরিয়া, বরাটি, ইচাইল, সারুটিয়া, পুষ্টকামুরী, দেওহাটা, কোর্ট বহুরিয়া, বহুরিয়া, কামারপাড়া, নাগরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে বহু পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট, হাট বাজারসহ ফসলি জমি। ৭-৮ টি পাকা ব্রিজ হুমকির মুখে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন।
পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল বলেন, নদী ভাঙ্গনে পৌরসভার ২, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের কয়েক শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পরেছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য এমপি মহোদয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, বংশাই-লৌহজং নদীর আশপাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন জানিয়েছেন মির্জাপুরে বেশ কয়েকটি এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য বালি ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। বংশাই-লৌহজং নদীর পৌরসভাসহ বেশী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য প্রকল্প তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//