মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ইমনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আনোয়ার পারভেজ শাহআলম ইমনের অসহায় পরিবারের হাতে নগদ এ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ সময় নিহত ইমনের ছোট ভাই সুমন, তার মা, শ্রমিক দলের নেতা মামুনুর রশিদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মির্জাপুর থানায় দায়ের করা মামলা ও নিহত ইমনের ভাই সুমন জানায়, পুলিশের গুলিতে নিহত ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন মন্ডল বাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। সে অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। পরিবারের অস্বচ্ছলতা দুর করার জন্য ইমন গোড়াই এলাকায় একটি পোষাক কারখানায় তার মায়ের সঙ্গে কাজ করতো। গত ৪ আগস্ট গোড়াই হাইওয়ে থানায় একদল দুস্কৃতিকারী হামলা করে। এসময় ওই স্থানে শান্তিপুর্ণ সমাবেশ করছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। দুস্কৃতিকারীরা থানা ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের সাথে দুস্কৃতিকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় ইমন পেটে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৮ আগস্ট ভোরে সে মারা যায়। ইমন মারা যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেঙ্গে পরে। পরিবারটি যাতে ঘুরে দাড়াতে পারে এ জন্য পাশে এসে দাড়িয়েছেন উপজেলা বিএনপি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপির মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর নির্দেশে খন্দকার আনোয়ার পারভেজ শাহআলম ইমনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন।
এদিকে ইমন মারা যায়ার পর তার ছোট ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা ও মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া গ্রেফতার হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।
মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, সাবেক দুই মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আলহাজ্ব আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, তানভীর হাসান ছোট মনি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, আমানুর রহমান খান রানা ও অনুপম শাজাহান জয়, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আসিফ অনিক, হংকং প্রভাসি সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, টাঙ্গাইল জেলা যুব লীগের সহসম্পাদক মঈন হোসেন রাজীব, মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ, গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হুমায়ুন কবীর, আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া, ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল এবং আনাইতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ময়নাল হক। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর গ্রেফতার আতংকে পলাতক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত মো. মোশারফ হোসেন বলেন, নিহত কলেজ ছাত্র ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় ১৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০/৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মো. বাদশা মিয়া নামে সাবকে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।

Discussion about this post