টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও পল্লী বিদ্যুতের শিল্প, বাণিজ্যিক, আবাসিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি হওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে। প্রতারক চক্র গ্রাহকদের জিম্মি করে চিরকুটে বিকাশের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গোড়াই জোনাল অফিস এবং টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ মির্জাপুর জোনাল অফিস এরিয়ায় ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির হিড়িক পরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস গোড়াই ও মির্জাপুর জোনাল অফিস এবং পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, গ্রাহকদের নিকট থেকেট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও মিটার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ আজ বধিবার (৩০ নভেম্বর) গোড়াই ইউনিয়নের বাইমাইল এবং সোহাগপাড়া এলাকায় দুই জন কৃষকের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
আজ বুধবার (৩০ নভেম্বর) পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সুত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গোড়াই জোনাল অফিস এবং টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ মির্জাপুর জোনাল অফিস এরিয়ার অধিনে গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার। ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র লোড শেডিংয়ে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিলের কারনে নাভিশ^াস। তার উপর একের পর এক ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির ফলে চরম বিপাকে পরেছছন অসহায় ও ভুক্তভোগির গ্রাহকরা। এ যেন প্রাহকদের উপর মরার উপর খরার ঘা। বোরো মৌসুমরে শুরুতেই ট্রান্সফরমার ওমিটার চুরির হিড়িক পরায় গ্রাহকরা পরেছেন চরম বিপাকে।
ভুক্তভোগি গ্রাহকদের মধ্যে গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হুমায়ুন কবীর আজ বুধবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে ৩-৪ টি ট্রান্সফরমার এবং ৭-৮ টি মিটার চুরি হয়েছে। বোরো মৌসুমরে শুরু হওয়ার আগেই কৃষকগন রাত জেগে পাহাড়া দিয়েও ট্রান্সফরমার এবং মিটার চুরি ঠেকাতে পারছেন না। সিন্ডিকেট চক্র অসহায় গ্রহাহকদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জামুর্কি ইউনিয়নের বানিয়ারা গ্রামের রাইজ মিলের মালিক শাহজালাল, মনির হোসেন, ও পরাগ কাজী অভিযোগ করেন,লোড শেডিংয়ের কারনে তাদের মিলের শিল্প মিটার চুরি হয়।
প্রতারক চক্র মিটার নিয়ে চিরকুটে মোবাইলে বিকাশে ১০-১২ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছে। ঝামেলা এড়াতে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা চক্রের সদস্যদের দিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছে। গোড়াই শিল্পা লের সোহাগপাড়া এলাকার শওকত হোসেন (৫৬) আসান উদ্দিন (৫৩), করিম মিয়া (৪৫), ওয়াজেদ মিয়া (৫৫)সহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সংঘ বদ্ধ চোরের দল ট্রান্সফরমার, শিল্প মিটার, বাণিজ্যিক মিটার ও ফ্লাট বাড়ির মালিকদের আবাসিক মিটার টার্গেট করে রাতের আধাঁরে মিটার চুরি করে নিয়ে যায়। মিটার চুরির পর মিটারের বাক্্ের চিরকুটে মোবাইল নম্বর লিখে যায়। বাংলা লিংকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে ৮-১০ হাজার টাকা চাঁদা দিলে মিটার ফেরত পাওয়ার আশ^াস দেন। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ঝামেলা এড়াতে ভুক্তভোগি অনেক গ্রাহক মোবাইল নম্বরে সংঘ বদ্ধ প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে মিটার ফেরত পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বিভিন্ন এরাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদ মিয়ার একটি, কানু মিয়ার একটি, নজরুল মিয়ার একটি, জাহাঙ্গীর মিয়ার দুইটি, কাশেম মিয়ার একটিসহ শতাধিক মিটার চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নে প্রতিনিয়তই মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগি এলাকাবাসি অভিযোগ করেছে। তবে সবচেয়ে বেশী মিটার চুরি হচ্ছে গোড়াই শিল্পা লে। সংঘবদ্ধ মিটার চোর চক্রের সঙ্গে সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর গোড়াই জোনাল অফিসের (ডিজিএম) বলেন, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির সঙ্গে জড়িত বলে তাদের ধারনা। মিটার চুরি হওয়া গ্রাহকদের নিকট থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় মামলা দায়ের ও টাঙ্গাইল র্যাব-১২ কে জানানো হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে তারা কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মির্জাপুর জোনাল অফিসের (ডিজিএম) জাকির হোসেন বলেন, গ্রাহকের নিকট থেকে মিটার চুরির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তারা থানা পুলিশ ও টাঙ্গাইল র্যাব-১২ কে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুইজন মিটার চোরকে আটক করেছে বলে জানতে পেরেছেন। বিষয়টির দিকে কঠোর পদক্ষেপ নেওযার জন্য তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সদস্যদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ এবং গ্রাহকদের নিকট থেকে মিটার চুরির বিষয়ে অভিযোগ এবং কিছু মোবাইল নম্বর ইতিপুর্বে পাওয়া গেছে। মিটার চুরির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর সদস্যগন মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

Discussion about this post