টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই শিশু সন্তানসহ সাত জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন।
মা ও শিশু সন্তানসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে পাকুল্যা এলাকায় অভার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসি টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে ৩০ কিলো মিটার এলাকায় তীব্র যানজটে হাজার হাজার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
এলাকাবাসি ও পুলিশ সুত্র জানায়, শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর সারে চারটার দিকে টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কের দুল্যা মনসুর নামক স্থানে ঢাকাগামী দাড়িয়ে থাকা একটি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী বালুভর্তি ট্রাককে পিছন দিক থেকে জামালপুর তেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বিনিময় পরিহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে বাসসের সামনের অংশ দুমরে মুচরে ঘটনাস্থলে বাসের তিন যাত্রী মারা যান। আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ, মির্জাপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালায়। আহতদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও একজন মারা যান। নিহতরা হচ্ছে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কাজিরাবাদ গ্রামের অলক রায় (৩৮), বিনয় রায় (৪০), মধুপুর উপজেলার সাকাওয়াত হোসেন (৩৬) এবং বরিশালের চরকাওয়া গ্রামের জাকারিয়া (৩২)। আহতদের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
অপর দিকে বেলা সারে এগারটার দিকে একই মহাসড়কের পাকুল্যা এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বাস চাপায় একই পরিবারের মা-মেয়ে-ছেলে নিহত হয়েছে। পাকুল্যা এলাকার বাসিন্দা গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী জানান, বেলা সারে এগারটার দিকে পানিশাইল বাবার বাড়ি থেকে বাঁশতৈল যাওয়ার পথে পারভীন বেগম (২৭) নামে এক মহিলা তার দুই শিশু সন্তান নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় উত্তর বঙ্গ থেকে ঢাকগামী একটি বাস তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই ৯ বছরের শিশু সাদিয়া মারা যায়। আহত হয় মা পারভীন ও ৭ বছরের ছেলে সুমন। তাদের উদ্ধার করে জামুর্কি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। তাদের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল গ্রামে।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসি পাকুল্যা বাস স্টেশন এলাকায় অভার ব্রিজ নির্মানের দাবীতে বিক্ষুব সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামুর্কি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সবাপতি আলতাব হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইলিয়াজ মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সাদারন সম্পাদক ফিরোজ আলম মোক্তার এবং বাংলাদেমের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি কমরেড গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী। এ সময় ঘটনাস্থলেল উভয় পাশে অন্তত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যান জট সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসি জানান, গত ৫ বছরের ব্যবধানে এখানে শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। প্রশাসন বার বার অভার ব্রিজ নির্মানের প্রতিশ্রæতি দিলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল) এ এস এম আবু মনসুর মুসা, সহকারী কমিশনার (ভুমি)আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এলাকাবাসি ঘোষনা দিয়েছেন, পাকুল্যা বাস স্টেশন এরাকায় অভার ব্রিজ নির্মানের সঠিক তারিখ ঘোষনা না দেওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ তুলে দিবেন না। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাকুল্যা এলাকায় অভার ব্রিজ নির্মানের ঘোষনা দিলে অবরোধকারীরা বিকেল তিনটার দিকে অবরোধ তুলে দিলে এ রোডে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুল বলেন, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক এবং এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। মামলা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের হস্তান্তর করা হয়েছে।
আর//দৈনিক দেশথ্যত//১৬ জুলাই-২০২২//

Discussion about this post