৬১ বছরের পুরনো বিদ্যাপিঠে ১০-১২ জন প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলেও তাদের নাম অনার বোর্ডে না রেখে একক ক্ষমতাবলে কেবলমাত্র নিজের নাম অনার বোর্ডে রেখেছেন।
৬১ বছরের পুরনো প্রাথমিক বিদ্যাপিঠ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের পোষ্টকামুরী আদর্শ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকরে একক ক্ষমতার দম্ভে শিশুদের পাঠদানে মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। ও্হই স্কুলের শিক্ষকরাও আতংকের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং অভিভাবকগন মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহকারি শিক্ষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেছেন বিদ্যালয়ের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে আফাজ উদ্দিন সিনিয়ন দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন ১৯৬১ সালে পোষ্টকামুরী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পোষ্টকামুরী, বাইমহাটি, গাড়াইল, সওদাগড়রপাড়া, মির্জাপুর বাজারসহ আশপাশের শিশুরা এখানে পাঠদান করে আসছে। পরবর্তীতে এটি উপজেলা সদরে একমাত্র মডেল প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা শরফুননিসা। বিদ্যালয় সুত্র জানায়, এক শিফটে পরিচালিত শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৩০ জন। শিক্ষক রয়েছেন ১৭ জন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণী কক্ষের প্রয়োজন ১৫ টি। সেখানে রয়েছে ১১ টি শ্রেণী কক্ষ। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষকদের অক্লান্ত শ্রম এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় বার্ষিক পরীক্ষা এবং সমাপনী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে।
এদিকে বর্তমান প্রধান শিক্ষক শরফুননিসা ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ৬১ বছরের পুরনো বিদ্যাপিঠে ১০-১২ জন প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলেও তাদের নাম অনার বোর্ডে না রেখে একক ক্ষমতাবলে কেবলমাত্র নিজের নাম অনার বোর্ডে রেখেছেন।
উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফি, বিদ্যালয়ের সংস্কারের টাকা, শিশুদের পোষাক নির্ধারনসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এ নিয়ে সহকারি শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ বিদ্যালয়ে দুই শিফট চালু নিয়ে দ্বদ্ধ চরম আকার ধারন করে। এক শিফট চালু থাকলে শিক্ষকদের সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা ১৫ মিনিটি পর্যন্ত এবং দুই শিফট চালু থাকলে সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয়। সহকারি শিক্ষকদের অভিযোগ, ইতিপুর্বে তাকে দুই শিফট চালুর জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি দুই শিফট চালু করেননি। সরকারি বিধিমোতাবেক মডেল বিদ্যালয়ে দুই শিফট চালুর পরিপত্র না থাকলেও এখন নানা অযুহাতে ও ক্ষমতার দাফটে সহকারি শিক্ষকদের ভয়ভিতি ও চাপ সৃষ্টি করে দুই শিফট চালুর উদ্যোগ নেন। সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সুপারিশ তোয়াক্কা করে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে গোপনে আতাত করে বিদ্যালয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয় এমপি, উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট বিষয়টি গড়ায়। সহকারী শিক্ষকরা বলেছেন, দুই শিফট চালু হলে বেশ কিছু সহকারী শিক্ষকের পদ কাটা যাবে এবং সেক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিবে। প্রধান শিক্ষকের দাপটে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা এক শিফট চালু রাখার জন্য জোরদাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মানিক স্যানালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক একক ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এলাকার অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুর্বের প্রধান শিক্ষকদের নাম বাদ দিয়ে তিনি শুধু অনার বোর্ডে তার একার নাম রেখেছেন। দুই শিফট চালুর নিয়ম না থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে দুই শিফট চালু নিয়ে সহকারি শিক্ষক ও এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি করছেন। তিনি শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে সহকারি শিক্ষকদের হুমকিসহ ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরফুননিসা বলেন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণী কক্ষ কম থাকায় পাঠদানে মারাত্বক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে পরামর্শ করে দুই শিফট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রেণী কক্ষ সমস্যার সমাধান হলে পরবর্তীতে আবার এক শিফট চালু হবে। বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সহকারি শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের কিছু লোকজন এবং অভিভাবকদের কিছু অংশ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অবপবাদ ছড়াচ্ছেন বলে তিনি দাবী করেন। ন্যায় নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ সংকট থাকায় শিশুদের পাঠদানের সুবিধার জন্য সাময়িক ভাবে দুই শিফট চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শ্রেণী কক্ষের সমস্যা সমাধান হলে পুনরায় এক শিফট চালু থাকবে। এ জন্য শিক্ষকদের কোন সমস্যা হবে না বলে তারা জানিয়েছেন।
জামাল//দৈনিক দেশতথ্য//মে ২৯,২০২২//