টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ১৩০ পদ শুন্য থাকায় পাঠদানে মারাত্বক সমস্যার সৃস্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঠদানে সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় চরম বিপাকে পরেছেন ভুক্তভোগি অভিভাবক এবং ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। আজ রবিবার উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সতত্যা পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘটনার সতত্যা স্বীকার করে বলেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা সদরের ২৩ নং বাইমহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককের পদ শুন্য। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষখ মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই বিদ্যালয় মির্জাপুর উপজেলা, টাঙ্গাইল জেলা, ময়নমনসিংহ অঞ্চল এবং ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ এবং বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের পুরষ্কার লাভ করে। অথচ এই স্বনামধন্য বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণীকক্ষ স্বল্পতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত নানা সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষকগন জানান, এই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৭০ জন। ৫৭০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক প্রয়োজন ১৪ জন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৯ জন। প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে যাওয়ায় ৯ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ায় হয়েছে। তিনি দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া বিপুর সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোন ওয়াশ ব্লক ও পর্যাপ্ত বাথরুম। এক দিকে শিক্ষক স্বল্পতা অপর দিকে শ্রেণী কক্ষের অভাবে এই বিদ্যালয়ে পাঠদানে মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগন জানিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাই, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল ১৪ ইউনিয়নে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭০ টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক থাকার কথা প্রায় ১২শ। সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ২০১৮ সালে ৬৩ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আবার অবসরে চলে যাচ্ছেন। নতুন করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষখ নিয়োগ হচ্ছে না। ১২শ শিক্ষকের বিপরীতে রয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০ জন। ১৩০ জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

অপর দিকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত সরিষাদাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমরাজানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুষ্টকামুরী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগধল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামুর্কি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, থলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেকুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিবিএ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওহাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মারিষনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাণ্ঠালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাটি হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উফুলকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুরনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়ার্শি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজগানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝুঁববাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রমুখ।
এ ব্যাপারে তিন জন প্রধান শিক্ষক এবং পাঁচজন সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করা তাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি দিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল সারে চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে তাদের একটানা ক্লাস নিতে হয়। একটানা ক্লাস নিতে গিয়ে অনেক শিক্ষক অসুস্থ্য হয়ে পরছেন। অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রদানের জন্য তারা উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়, শিক্ষা সচিব এবং মন্ত্রীর নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক থেকে ৬৩ জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব পেয়েছেন। আবার প্রতি বছর অনেক শিখ্ষক অবসরে চলে যাচ্ছেন। মির্জাপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেশ কিছু পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় পাঠদানে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ হলে শিক্ষখ স্বল্পতা কেটে যাবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুলাই ২৫,২০২২//