Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 4:08 pm

মির্জাপুরে ভুঁতড়ে বিলে দিশেহারা পল্লী বিদ্যুতের দেড় লাখ গ্রাহক

মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভুঁতড়ে বিলে দিশেহারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেড় লাখ গ্রাহক।

ভুঁতড়ে ও ভুয়া বিলে বিদ্যুৎ বিভাগ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝিারি ও ভারি শিল্পের মালিকরা গ্রাহকরা চরম বিপাকে বলে অভিযোগ করেছেন।

একটি মিটারের বিপরীতে গ্রাহককে দেড় থেকে দুই গুন এবং কোন কোন গ্রাহককে চার থেকে পাঁচগুন পর্যন্ত ভুয়া বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় পাওয়া পাঁচ শতাধিক অসহায় পরিবার।

আজ সোমবার (২৪ জুন) মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের মালিক ও আবাসিক গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধিনে মির্জাপুর উপজেলা সদরে বাওয়ারকুমারজানি এলাকায় একটি এবং গোড়াই শিল্পাঅঞ্চলের গোড়াই এলাকায় টাঙ্গাইল কটন মিলস সংলগ্ন একটিসহ দুইটি জোনাল অফিস রয়েছে। দুইটি জোনাল অফিসের অধিনে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, রতিফপুর, আজগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পসহ গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এপ্রিল ও মে মাসের পল্লী বিদ্যুতের প্রতি মিটারের গ্রাহকের বিলে সব চেয়ে বেশী বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি মিটারের বিপরীতে একজন গ্রাহককে বিল প্রতি দেড় থেকে দুই গুন এবং কোন কোন গ্রাহককে চার থেকে পাঁচগুন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভুয়া বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মির্জাপুর পৌরসভার একটি বাসার ভাড়াটিয়া (আবাসিক গ্রাহক) সুরাইয়া বেগম অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে তার মিটারে বিল এসেছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০শ টাকা। মে মাসে তাকে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ১১শ টাকা। তার ধারনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজির কারনে অতিরিক্ত ভুয়া বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুরাইয়া বেগমরে মত গোড়াইয়ের বাবুল সিকদার, জামুর্কির আবুল হাসেম, বাঁশতৈলের আব্দুল কাদের, আজগানার চাঁন মিয়াসহ অন্তত ৩০-৪০ জন গ্রাহক এমন অভিযোগ করেছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেছেন, তাদের নামে অতিরিক্ত ভুতড়ে বিল ধরিয়ে দেওয়া হলেও মিটারের রিডিংয়ের সঙ্গে বিল কপির মিল নেই।
উপজেলার দেওহাটা, গোড়াই, বহুরিয়া, তরফপুর, বানাইল ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকলেল আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় পাওয়া ভবঘুরে, দিনমজুরসহ অসহায় পরিবারগুলো ভুতড়ে বিলের কারনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ প্রতিটি গ্রাহককে জিম্মি করে পল্লী বিদু্যৎ বিভাগ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রিডার এবং অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন এই অতিরিক্ত ভুয়া বিল তৈরির সঙ্গে জড়িত। জুন মাস ক্লোজিং এর নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের গ্রাহকরা দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এক দিকে দিনে রাতে লোড শেডিং এর কারনে তাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপর দিকে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত ভুতড়ে বিলের কারনে বিল পরিশোধ করতে তারা চরম বিপাকে পরেছেন।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-এর মির্জাপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মির্জাপুর উপজেলায় দুইটি জোনাল অফিসের অধিনে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। গত দুই মাসে বিল বেশি হওয়ার মুলক কারন হচ্ছে বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার হয়েছে এবং লোড শেডিং কম হয়েছে। ফলে প্রতিটি মিটারের বিপরীতে একটু বেশি বিল হয়েছে। যদি কোন গ্রাহকের নামে খুব বেশি বিল হয়েছে বলে তিনি মনে করেন, তিনি অফিসে আসলে বিল সংশোধন করে দেওয়া হবে।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//