মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধিনে শিল্প নগরীর জন্য জমি অধিগ্রহন হলেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না ৩৩ অসহায় পরিবার। ক্ষতিপূরণ না পেয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। উচ্ছেদ আতংকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন যাপন করছে অতি দরিদ্র অসহায় পরিবারগুলো।ক্ষতিপূরণ না পাওয়া অসহায় ও নিরীহ পরিবারগুলো প্রধান মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আকুতি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে জীবন দিব তবু ভিটেমাটি ছেড়ে যাবো না।
আজ শনিবার (২ জুলাই) গোড়াই মমিননগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সাত্তার, তাহের মিয়া, জিয়ারুল, হাসেম, আরিফা বেগম, আছমা বেগম, হাসিনা বেগম, মালেক ও আলহাজ¦ মিয়াসহ অসহায় ৩৩ পরিবার জানান, মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মমিননগর মৌজায় ৩০৯ নং ক্ষতিয়ানের সাবেক দাগ নং ৩০৪৫ এবং বর্তমান দাগ নং ২৩৭২ এ জমি ক্রয় করে যুগ যুগ ধরে তারা বসবাস করে আসছেন। যারা বসবাস করছেন তারা সবাই অতি দরিদ্র এবং দিনমজুর। তাদের নামে দলিল, খাজনা, খারিজসহ বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে জানান। আমাদের এই ভিটেমাটি টুকুই শেষ সম্বল। ভিটেমাটি হারালে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাড়াবো তার কোন ঠিকানা নেই।
অপর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সুত্র জানায়, এলাকার বেকারদের জন্য অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষে ৪৯ দশমিক ৩৫ একর জমির উপর বিসিক শিল্প পার্ক (শিল্প নগরী) স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালে জমি অধিগ্রহন শুরু করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখা এবং বিসিক শিল্প মন্ত্রনালয়। ইতি মধ্যে জমি অধিগ্রহন, ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার এবং বেশ কিছু জমির মালিকদের ক্ষতিপুরন দেওয়া শুরু হয়েছে। নানা অযুহাতে ৩৩ পরিবারকে কোন প্রকার ক্ষতিপুরন না দিয়ে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর সুপারিশ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও এডিসি বরাবর আবেদন করেছেন। প্রশাসন থেকে তাদের জমি ও ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বার বার নোটিশ দিয়ে হুমকি দেওয়ায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গোড়াই মমিননগর এলাকায় শিল্পনগরী হচ্ছে। সরকারী খাস জমিতে যারা দীর্ঘ দিন বসবাস করছেন, তাদের অনুরোধ করা হয়েছে সরকারী জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। জেলা প্রশাসক মহোদয় তাদের বসবাসের জন্য দেওহাটা এলাকায় সরকারী খাস জমি এবং নগদ পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারপরও তারা জমি ছেড়ে যাচ্ছেন না। সরকারী নির্দেশনায় এখন আমাদের উচ্ছেদ করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মমিননগর এলাকায় বিসিক শিল্পপার্ক নির্মান হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ঐ এলাকায় জমি অধিগ্রহনসহ মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এটির নির্মান কাজ শেষ হলে এলাকায় নতুন দিগন্তের সুচনা হবে। যাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। যারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না তাদের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে এবং তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, গোড়াই মমিননগর মৌজায় শিল্পনগরী স্থাপন এলাকায় যারা বসবাস করেছেন তাদের ক্ষতিপুরনের জন্য একাধিকবার তালিকা করা হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো যাতে ক্ষতিপুরন পায় সে জন্য জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তিনি জোর দাবী জানিয়েছেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//