মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশের অভিযানে ১০ মাদক কারবারি গ্রেফতার। আজ বুধবার (৮ জুন) ভোরে দেওহাটা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আইয়ুব হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং ওসি তদন্ত মো. গিয়াস উদ্দিন অভিযানে নের্তৃত্ব দেন। মাদক কারবারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠায় এলাকায় বাড়ছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই। জুয়া ও মাদকের ছোবলে পরে অনেকেই সর্বশান্ত। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ। অপরাধীরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকায় মাদক ও জুয়ার জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ যেন মাদকের রাজধানী এখণ মির্জাপুর। তবে স্থানীয় এমপি খান আহমেদ শুভ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ মাদক নির্মুলে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে বাস ও ট্রেনে উত্তরাঞ্চল থেকে মাদকের চালান আসছে মির্জাপুরে। মির্জাপুরে মাদক কারবারীরা বিভিন্ন ভাগে মাদকের চালান পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এ মাদক ব্যবসা বলে অভিযোগ রয়েছে। মির্জাপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মাদক কারবারী ও জুয়াড়ি। তাদের সহযোগিতা করে থাকেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অপরাধী সিন্ডিকেট চক্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, মির্জাপুর সাহাপাড়া, কুমুদিনী হাসপাতাল সংলগ্ন লৌহজং নদীর ঘাট, বাইমহাটি, ঘোষপাড়া, আন্ধরা, পাহাড়পুর, বাবু বাজার, মুসলিমপাড়া, পাহাড়পুর, সারিষাদাইর, শ্রীহরিপাড়া, রাজনগর, কুতুববাজার, কান্ঠালিয়া, বাওয়ার কুমারজানি, বংশাই সেলুঘাট, গাড়াইল, ত্রিমোহন, সওদাগড়পাড়া, কাঁচাবাজার, প্রফেসরপাড়া, বাইমহাটি এবং পুষ্টকামুরী গ্রাম এখন মাদকের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, দেশী-বিদেশী মদ, বাংলা ও চোলাই মদ। এসব এলাকার বাজারের অধিকাংশ চা স্টলে পর্দার অন্তরালে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাহাপাড়া গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মাদক ও জুয়ার ভয়াবহ চিত্র। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, মাদক কারবারী ও জুয়াড়িদের কারনে তারা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। প্রকাশ্যেই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হয়। মাদক সেবীরা মাদক সেবন করে রাস্তা ঘাটে মাতলামি করে পথচারীদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজও করছে। উপজেলার মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নের বেশ কিছু পয়েন্টে পাল্লা দিয়ে চলছে মাদক ব্যবসাসহ জুয়া আসরসহ নানা অপরাধ।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ কমি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মির্জাপুরকে মাদক মুক্ত করার জন্য। পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে মাদক ব্যবসা ও জুয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক ও জুয়াড়ীরা যত শক্তিশালীই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেল নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং এসিল্যান্ড মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা এবং কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। তাদের এ মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে খান আহমেদ শুভ এমপি বলেন, মাদক কারবারিদের সঙ্গে কোন অবস্থায় আপোষ নয়। মির্জাপুরের উন্নয়নে যুব ও তরুন সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীর একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে তিনি অভিভাবকদের বেশী সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মাদক, জুয়া, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং ও বাইকার গ্রুপদের বিরুদ্ধে কঠোর ভ্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//