মোমেসুর রহমান:
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পদ্মার চরের ছয় জায়গা থেকে নিহত মিলনের (২৪) লাশের ৯ টি খন্ডাংশ খুঁজে পায় পুলিশ। মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্স সরদারের ছেলে।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চরে অভিযান চালায় পুলিশ। মিলন হোসেন হত্যাকাণ্ডে আটক ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত রবিবার (৪ জানুয়ারি) আদালতে হাজির করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত।
আদালতে আদালতে সোপর্দ করা আসামীদের আছে জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সজীব শেখ (২৪)। কুমারগাড়া এলাকার ফয়সাল আহমেদ (২৫), দেশওয়ালীপাড়ার কাজী লিংকন (৩২), সদর উপজেলার কান্তিনগর গ্রামের জনি প্রামাণিক (২১), হাউজিং সি ব্লকের ইফতি খান ও ডি ব্লকের সজল ইসলাম (১৮)।
ছয় আসামীর মধ্যে সজীব শেখ ও ইফতি খানকে সাত দিনের জন্য রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। গত সোমবার রিমান্ড আবেদন শুনানির কথা থাকলে তা হয়নি। মঙ্গলবার আদালত তাদের রিমান্ড আবেদন মন্জুর করেন আদালত।
আসামীদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত এসকে সজীব একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মহলের মদদপুষ্ঠ। ওই মহলের ছত্রছায়ায় থেকে সজীব ও তাঁর সহযোগীরা বাসা ভাড়া নিয়ে নানা অপকর্ম করে আসছিলেন।
পুলিশ বলছে, যে বাসায় তারা মিলনকে হত্যা করেছিল ওই বাসাটি কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকায় অবস্থিত। বাসাটির মালিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সজীব সাত তলা ভবনের ছয়তলা ভাড়া নিয়েছিলেন।
রোববার দুপুরে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গেটে কোনো দারোয়ান নেই। ডেকেও কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজন তাঁদের বিষয়ে কখনো মুখ খোলেনি। ওখানকার মুদিদোকানি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এ বাসায় অনেকে যাতায়াত করতেন। সবাই কম বয়সী ছেলে। মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম করলেও কেউ কখনো বিষয়টি আমলে নেননি।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাতে জানা গেছে, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সজল ফোন করে মিলনকে অফিসে ডেকে নেয়। সেখানে আগে থেকেই সজীবসহ কয়েকজন অবস্থান করছিল। সজীব মিলনের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওযায় তাঁকে মারধর করে। এরই একপর্যায়ে মিলনের মুখে গামছা গুঁজে নাক চেপে ধরে সজীব। এতে মিলন মারা যায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মিলনকে হত্যার সময় ওই অফিসের দুটি কক্ষে সজীবসহ অন্তত ১০ থেকে ১১ জন ছিলেন। লাশ গুম করতে সজীব পরিকল্পনার কথা জানান তাঁদের। এ সময় একজনকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে বাইরে চলে যায়। বাকিরা ঘরের ভেতর থাকেন। দেড় ঘণ্টা ধরে শহরের তিনটি দোকান থেকে লাশ কাটার জন্য হেক্সা ব্লেড, পলিথিন ব্যাগ ও রক্ত পরিষ্কারের জন্য জীবাণুনাশক কেনেন।
বিকেল পাঁচটার দিকে আবার অফিসে ফিরে আসেন। পরে দুর্বলচিত্তের ৪-৫ জনকে পাশের কক্ষে রাখেন। সজীবসহ ৪-৫ জন মিলে লাশটি বাথরুমে নিয়ে ৯ টুকরো করে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে লাশ কেটে তাঁরা ব্যাগে ভরেন।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে চারটি মোটরসাইকেলে সাতজন ব্যাগ নিয়ে বের হয়। বাকিদের যে যার মতো বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয় সজীব। পুলিশ শহরের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা গেছে, রাত ৯টা ৩২ মিনিটের দিকে চারটি মোটরসাইকেলে সাতজন শহরের ছয়রাস্তা মোড় হয়ে হরিপুর সেতু দিয়ে পদ্মার চরের দিকে গেছেন। রাত ১১টার মধ্যে লাশের টুকরাগুলো পদ্মার চরে বালুচাপা দিয়ে যে যাঁর মতো বাড়ি চলে যায়। এরপর সবাই স্বাভাবিকভাবে শহরে চলাফেলা করতে থাকে। তারা কেউ পালানোর চেষ্টা করেনি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ফেব্রুয়ারী ০৬,২০২৪//

Discussion about this post