ইতিহাস, ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক উর্বর ভূমি ও দেশের প্রথম শত্রু মুক্ত ডিজিটাল জেলা যশোর। ভাষা আন্দোলন থেকে মহান স্বাধীনতার ঐতিহ্য-স্মৃতি বহন করছে স্বগৌরবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক নানা ভাস্কর্য ও ম্যুরাল দিয়ে সাজানো হয়েছে শহরের বিভিন্ন চত্বর, দেয়াল, স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাসগুলো। ফলে নতুন প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষ খুব সহজেই জানতে পারছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শহরের সৌন্দর্যও।
যশোর শহরের প্রাণ কেন্দ্র দড়াটানায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। দাঁড়িয়ে থাকা এই ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উচ্চারিত হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা।
যশোর শহরের প্রবেশদ্বার পার হলেই মনিহার সিনেমা হলের ঠিক সামনেই যশোরের বিজয় স্তম্ভ । বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর এর ভিত্তি স্থাপন করেন। এখানেই রাখা হয়েছে মুঘল যুগের একটি কামানও।
যশোর শহরের পুরাতন কসবায় গেলে দেখা মিলবে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের। কাঁধে রাইফেল, আর স্বপরিবারে শান্তির পায়রা উড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বগৌরবে।
পালবাড়ি মোড় এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে যশোরের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি। এই পথেই যৌথ বাহিনী যশোর শহরে প্রবেশ করেছিল পাক বাহিনীর পলায়নের পর। বিজয়ের পর সেই স্মৃতি অমরতা পেয়েছে এই ভাস্কর্যে।
শহরের পাশেই টাউন হল ময়দান। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এই ময়দানে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বাধীনতার উন্মুক্ত মঞ্চ’ ।
দেশের অন্যতম বধ্যভূমি যশোরের শঙ্করপুর হাঁস-মুরগির খামার। এ হাঁস-মুরগির খামারটি আইয়ুব খানের শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বধ্যভূমিতে একাত্তরে বিহারিরা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী এখান থেকে কয়েক ট্রাক হাড়-কঙ্কাল সরিয়ে নিয়ে গেছে। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই বধ্যভূমির পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি নির্মাণ করে।
স্বাধীনতাকামী যশোরে মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে তৈরি এসব ভাস্কর্য ও মুর্যাল একদিকে শহরে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরছে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//