প্রথমে ঢাক-ঢোল, কাঁশিসহ অন্যান্য বাদ্য যন্ত্র বাজতে থাকে। এর পর বাদ্যের তালে তালে লাঠিয়ালরা বাঁশের লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে মাঠে প্রবেশ করেন। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ভেলকি ও কেরামতি দেখাতে থাকেন। এসব দেখে মুগ্ধ নানা বয়সী শতশত দর্শক। লাঠিয়ালদের উৎসাহ দিতে তারা দুহাতে তালি দিচ্ছেন।
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে সোমবার দিনব্যাপী গ্রাম বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের বরইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে।
৩১ অক্টোরব ইউনিয়নের বিল বরইচারা যুদ্ধ দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বিল বরইচারা স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে পতাকা উত্তোলণ, দোয়া, স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল।
বিল রবইচারা যুদ্ধের অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাবের সভাপতত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধকালীন জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আবুল মনসুর মজনু, যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানসহ আরো অনেকে।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগীতায় বরইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৪ টি দলের প্রায় ৬৫ জন দুই লাঠি, চার লাঠি, শর্কি খেলা, তলোয়ার ও ছুরিসহ নানান খেলা প্রদর্শন করেন। লাঠি খেলায় একদল শিশুও তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।
ষাটোর্ধ আবুল কাশেম বলেন, ‘ এখন নিত্য নতুন খেলা আবিস্কার হয়েছে। লাঠি খেলা খুব একটা চোখে পড়েনা। ঢোলের বারি (শব্দ) শুনে চলে আইছি (এসেছি)। অনেক দিন পর খেলা দেখে শৈশবে ফিরে গিছি। খুব ভাল লাগছে।’
লাঠিয়াল সরদার শহিদ শেখ বলেন, ‘ দিন দিন হারাতে বসেছে লাঠিখেলা সহঅন্যান্য গ্রাম-গঞ্জের খেলা। নতুন কেউ এসব খেলায় আসতে চাইনা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমার নাতিন শারমিনকে লাঠিখেলা শেখাচ্ছি।’ যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘ যুদ্ধ দিবস উপলক্ষে ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ৪ টি দলেরর ৬৫ অংশ নেন। খেলা দেখে সবাই খুশি।’
প্রসঙ্গত , ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিল বরইচারা নামের স্থানে পাক বাহিনী, আলবদর ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল ইসলাম বদরের নেতৃত্বে ১৩ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জা// দৈনিক দেশতথ্য// ১ নভেম্বর, ২০২২//

Discussion about this post